সর্বশেষ

জাতীয়

বিবিসির অনুসন্ধানে বেড়িয়েছে তথ্য, নিহতের ফোনে মিলল ভয়াবহ ভিডিও 

স্টাফ রিপোর্টার
স্টাফ রিপোর্টার

বুধবার, ৯ জুলাই, ২০২৫ ১১:১৬ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি বাংলা সম্প্রতি একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দাবি করেছে, গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশে সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে অন্তত ৫৮ জন নিহত হন।

বিবিসির হাতে আসা ভিডিও, অডিও এবং অন্যান্য নথির ভিত্তিতে এই তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ৫ আগস্ট দুপুর ২টা ৪৩ মিনিটে যাত্রাবাড়ী থানার সামনে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করে পুলিশ। এই ঘটনার মূল ভিত্তি হিসেবে বিবিসি যে ভিডিও ফুটেজ ব্যবহার করেছে, তা ধারণ করেছিলেন মিরাজ হোসেন নামের এক বিক্ষোভকারী, যিনি ওইদিন গুলিতে নিহত হন। তার পরিবারের কাছ থেকে মোবাইলটি সংগ্রহ করে ভিডিওর মেটাডেটা বিশ্লেষণ করে বিবিসি।

ভিডিওতে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীদের সামনে প্রথমে সেনাবাহিনীর একটি দল অবস্থান নেয়। কিছু সময় পর তারা এলাকা ত্যাগ করলে, থানার ভেতরে অবস্থানরত পুলিশ সদস্যরা আকস্মিকভাবে গুলি ছোড়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর। আশপাশের ভবনের সিসিটিভি ও ড্রোন ফুটেজে পালাতে থাকা মানুষের দৃশ্যও উঠে এসেছে।

একাধিক ভিডিওতে আহতদের ওপর লাথি মারার চিত্রও দেখা গেছে। এছাড়া, আগের দিন অর্থাৎ ৪ আগস্ট থানা থেকে মহাসড়কে পুলিশ সদস্যদের গুলি চালাতে যাওয়ার দৃশ্যও ভিডিও ফুটেজে উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, ঘটনাস্থলে অন্তত ৩০ মিনিট ধরে মেশিনগান থেকে গুলি চালানো হয়। একই সময়ে কিছু ট্রাক ও যানবাহনে আগুন লেগে থাকতে দেখা যায়। আহতদের অনেকে রিকশা, বাইক ও ভ্যানে করে হাসপাতালে নিতে চেষ্টা করেন আন্দোলনকারীরা।

ঘটনার পরদিন পর্যন্ত সংবাদমাধ্যমগুলোতে প্রাথমিকভাবে ৩০ জন নিহত হওয়ার কথা বলা হলেও, বিবিসির নিজস্ব যাচাই-বাছাই ও নিহতদের স্বজন, হাসপাতালের রেকর্ড এবং সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট বিশ্লেষণ করে মোট ৫৮ জন নিহতের তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। এদের মধ্যে সাধারণ মানুষ ও পুলিশ সদস্য—দু’পক্ষই ছিলেন।

ঘটনার পর বিক্ষোভকারীদের একটি অংশ শাহবাগের দিকে এগিয়ে গেলেও অন্য অংশ যাত্রাবাড়ীতেই অবস্থান করে এবং পরবর্তীতে থানায় আগুন দেয়। এতে পুলিশের ছয় সদস্য নিহত হন।

ঘটনার পর যাত্রাবাড়ী থানার তৎকালীন ওসি আবুল হাসানসহ কয়েকজন পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা হয়। তবে সেনা সদস্যদের ভূমিকা নিয়ে জানতে চাইলেও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

প্রতিবেদনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো, একটি অডিও রেকর্ডিং—যেটিকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফাঁস হওয়া ফোনালাপ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অডিওতে এক অজ্ঞাত সরকারি কর্মকর্তাকে শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলতে শোনা যায়, যেখানে তিনি ‘প্রয়োজনে প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগে’ অনুমতি দেন।

অডিওটির সত্যতা যাচাই করেছে বিবিসি এবং যুক্তরাজ্যভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা ‘ইয়ারশট’। তারা জানিয়েছেন, ক্লিপটিতে কোনো রকম সম্পাদনার প্রমাণ নেই এবং এটি কৃত্রিমভাবে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনাও অত্যন্ত কম।

বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগও জানিয়েছে, অডিওটিতে থাকা কণ্ঠস্বরটি শেখ হাসিনার কণ্ঠস্বরের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। ওই কথোপকথন ১৮ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন থেকে করা হয়েছিল বলে একজন অবগত সূত্র বিবিসিকে নিশ্চিত করেছেন।

উল্লেখ্য, শেখ হাসিনার নামে আরও বেশ কিছু ফোনালাপ সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, তবে এদের অনেকগুলো এখনও যাচাই করা হয়নি।

১৫৪ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
জাতীয় নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন