ফেনীতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, প্লাবিত ৩০ গ্রাম

বুধবার, ৯ জুলাই, ২০২৫ ৬:১২ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
ভারী বর্ষণ ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এর প্রভাবে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার অন্তত ১৪টি স্থানে নদী রক্ষা বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে পড়েছে লোকালয়ে। এতে দুই উপজেলার অন্তত ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে এবং হাজারো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
বাঁধ ভাঙনের ফলে পরশুরাম উপজেলা জেলা শহরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মুহুরী, সিলোনিয়া ও কহুয়া নদীর বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে পরশুরামের জঙ্গলঘোনা, অলকা, শালধর, গদানগর, সাতকুচিয়া ও বেড়াবাড়িয়া এবং ফুলগাজীর উত্তর শ্রীপুর, দেড়পড়া ও দৌলতপুর এলাকা উল্লেখযোগ্য।
পরশুরামের মধ্যম ধনীকুন্ডার বাসিন্দা নাহিদা সুলতানা বলেন, "সন্ধ্যার পর ঘরে পানি ঢুকতে শুরু করে। কিছু জিনিসপত্র নিয়ে ছাদে আশ্রয় নিয়েছি। গেলো বছরও বন্যায় সব হারিয়েছি, এবার আবার সেই পরিস্থিতি।"
একই অভিযোগ করেন মির্জানগর ইউনিয়নের শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, “পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতিতে বাঁধের দুর্বল অংশ ঠিক করা হয়নি। প্রতিবছরই দায়সারা কাজের খেসারত দিচ্ছে সাধারণ মানুষ।”
পরশুরাম উপজেলার ইউএনও আরিফুর রহমান জানিয়েছেন, “ভাঙনের ফলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। তবে মানুষ এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে চাচ্ছে না।”
ফুলগাজী উপজেলার ইউএনও ফাহরিয়া ইসলাম বলেন, “তিনটি নদীর বাঁধে চারটি স্থানে ভাঙনের তথ্য পেয়েছি। আশ্রয়কেন্দ্রে শতাধিক মানুষ এসেছে, তাদের জন্য শুকনো ও রান্না করা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া বুধবার উপজেলার উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।”
জেলার আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৪১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা সাম্প্রতিক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। বুধ ও বৃহস্পতিবারও মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে।
জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানান, ফুলগাজী ও পরশুরামে সম্ভাব্য বন্যা মোকাবিলায় ১৩১টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ফুলগাজীতে ৩২টি মাধ্যমিক ও ৬৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং পরশুরামে ৩২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য শুকনো খাবার, রান্না করা খাবার ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।
দুর্গতদের সহায়তায় দুই উপজেলায় ৮০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া জরুরি ত্রাণ কাজে সাড়ে ৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এবং ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখা হয়েছে কন্ট্রোল রুম।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আবুল কাশেম জানান, নদীগুলোর পানি এখনো বিপৎসীমার ওপরে রয়েছে এবং উজানে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে আরও বাঁধ ভাঙনের আশঙ্কা রয়েছে।
১২০ বার পড়া হয়েছে