সর্বশেষ

সারাদেশ

রক্তের এক ফোঁটায় জীবন, মানবতার বন্ধনে ‘রক্তিম বন্ধন’

বরগুনা প্রতিনিধি
বরগুনা প্রতিনিধি

মঙ্গলবার, ৮ জুলাই, ২০২৫ ৬:৪০ অপরাহ্ন

শেয়ার করুন:
দক্ষিণাঞ্চলের হাসপাতালে যখন এক ব্যাগ রক্তের অভাবে থমকে যায় অপারেশন থিয়েটার, চোখের সামনে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে একজন মায়ের, শিশুর কিংবা আহত দুর্ঘটনার শিকার রোগীরা—ঠিক তখনই জীবনরক্ষার লড়াইয়ে নামে একদল তরুণ।

মানবিক উদ্যোগে গঠিত সংগঠনটির নাম—‘রক্তিম বন্ধন ফাউন্ডেশন’।

২০২১ সালের ৩০ মে আনুষ্ঠানিক ভাবে বালিয়াতলী চরকগাছিয়া দাখিল মাদ্রাসার লাইব্রেরি কক্ষে স্থানীয় কতিপয় তরুণ এবং যুবকদের মানবিক উদ্যোগে যাত্রা শুরু করে সংগঠনটি। প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে রয়েছেন খ্যাতিমান সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী ও কলামিস্ট খাজা মাসুম বিল্লাহ কাওছারী, যিনি আধ্যাত্মিকভাবে বিখ্যাত সুফি সাধক খাজা ফয়েজ উদ্দিন (রহঃ) এবং খাজা নাছের আলী (রহঃ) এর উত্তরসূরি। শুরু থেকেই তাঁর নেতৃত্বে সংগঠনটি দক্ষিণাঞ্চলে রক্তদানের মাধ্যমে হাজারো জীবন রক্ষায় এগিয়ে আসে।
সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, রক্তিম বন্ধন ফাউন্ডেশন এ পর্যন্ত হাজারের বেশি মুমূর্ষু রোগীকে রক্ত সরবরাহ করেছে। বিশেষ করে সিজারিয়ান অপারেশনের সময় মায়েদের রক্তের প্রয়োজন মেটাতে সংগঠনটির কার্যক্রম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। দুর্ঘটনা, অস্ত্রোপচার, থ্যালাসেমিয়া, ক্যান্সারসহ বিভিন্ন জটিল রোগের রোগীদেরও সেবা দিয়ে যাচ্ছে এই সংগঠনটি।

রক্তিম বন্ধন ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সিডরো (SEDRO)-এর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে। ‘সিডরো ব্লাড ডোনার ইউনিট’ এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে একত্রে কাজ করছে রক্তিম বন্ধন। রক্ত সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং রোগীর কাছে পৌঁছানো পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে স্বেচ্ছাসেবকরা নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি খাজা মাসুম বিল্লাহ কাওছারী এই প্রতিবেদককে বলেন - 'আমার দাদা-পরদাদা যেভাবে আধ্যাত্মিক ও মানবিক খেদমতের চর্চা করতেন, আমরা সেই পথেই হাঁটছি। একজন মানুষের প্রাণ বাঁচাতে পারা, এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন।'

তিনি আর বলেন - 'সিডরোর মাধ্যমে আমরা একটি টেকসই রক্তদাতা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছি। এখানে শুধু রক্ত নয়, রোগীর পরিবারকে মানসিকভাবে সাহস জোগানোর কাজটিও আমরা করি।'

রক্তিম বন্ধন ফাউন্ডেশনের সাথে দীর্ঘদিন কাজ করা স্বেচ্ছাসেবকরা জানান-একজন মায়ের অপারেশনের আগে হাসপাতাল থেকে ফোন আসে—‘জরুরি রক্ত দরকার’। আমরা নিজেরাই বাইকে করে রক্ত নিয়ে গিয়ে পৌঁছে দেই। এতে হয়তো ঘাম ঝরে, কিন্তু একেকটা জীবন বাঁচানোর আনন্দই আমাদের চলার প্রেরণা।'

সংগঠনটি বর্তমানে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় শাখা বিস্তার করছে। পাশাপাশি, একটি স্বয়ংক্রিয় রক্তদাতা ডেটাবেইজ ও অ্যাপ তৈরির কাজ চলমান রয়েছে, যার মাধ্যমে দ্রুত রক্ত খুঁজে বের করা এবং দাতার সাথে রোগীর সংযোগ ঘটানো সহজ হবে।

রক্তিম বন্ধনের এই কার্যক্রম এখন শুধু রক্ত সরবরাহেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি একটি মানবিক চেতনার আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন স্কুল-কলেজে সচেতনতামূলক সেমিনার, রক্তদানে উৎসাহিত করতে ক্যাম্পেইন এবং থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য বিশেষ সেবা প্রবর্তন করতে যাচ্ছে সংগঠনটি।

সাধারণ এক তরুণের একটি ফোনকল, এক ফোঁটা রক্ত আর মানবিক উদ্যোগ—এই তিনটি উপাদানই আজ অসংখ্য প্রাণের বেঁচে থাকার কারণ। 'রক্তিম বন্ধন' আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, মানুষ মানুষের জন্য—এ কথাটি এখনো বাংলাদেশে কিছু মানুষের হৃদয়ে জীবন্ত।

১২৫ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
সারাদেশ নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন