জাপানে টানা দুই সপ্তাহে ৯'শ ভূমিকম্প, আতঙ্কে দ্বীপবাসী

বৃহস্পতিবার , ৩ জুলাই, ২০২৫ ৭:৪০ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
জাপানের দক্ষিণাঞ্চলের টোকারা দ্বীপপুঞ্জে গত দুই সপ্তাহে ৯০০-রও বেশি ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে অঞ্চলটি।
একের পর এক কম্পনে স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, অনেকে ঠিকমতো ঘুমাতেও পারছেন না।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, গত ২১ জুন থেকে শুরু হওয়া এই ভূমিকম্প প্রবণতা এখনো অব্যাহত রয়েছে। সর্বশেষ বুধবার (৩ জুলাই) রিখটার স্কেলে ৫.৫ মাত্রার কম্পন রেকর্ড করা হয়। জাপানের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ সংস্থা জানিয়েছে, দ্বীপপুঞ্জের আশপাশের সমুদ্রে ভূমিকম্প সংক্রান্ত তৎপরতা অত্যন্ত সক্রিয়।
যদিও এখন পর্যন্ত কোনো বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি বা সুনামির আশঙ্কা নেই বলে প্রশাসন জানিয়েছে, তবুও স্থানীয়দের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে এবং প্রয়োজনে দ্রুত সরে যাওয়ার প্রস্তুতি রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, প্রতিটি ভূমিকম্পই মানসিক চাপে ফেলছে। এক বাসিন্দা জানান, “ঘুমাতে গেলেই মনে হয় মাটি কাঁপছে। সবসময় অস্বস্তি লাগে।” আরেকজন বলেন, “রাতে সমুদ্র থেকে এক ধরনের গর্জনের শব্দ আসে, এরপরই ভূমিকম্প হয়। বিষয়টা যেন দুঃস্বপ্নের মতো।”
৬০ বছর বয়সী ইসামু সাকামোতো, যিনি আকুসেকিজিমা দ্বীপের বাসিন্দা ও স্থানীয়দের প্রতিনিধি, জানান, “ভূমিকম্পের সময় মাটির নিচ থেকে ঝাঁকুনি আসে, তারপর পুরো ঘর কেঁপে ওঠে। এমন অবস্থায় শারীরিকভাবে অসুস্থও লাগতে থাকে।”
টোকারা দ্বীপপুঞ্জে ১২টি দ্বীপ রয়েছে, যার মধ্যে মাত্র সাতটিতে মানুষের বসবাস। মোট জনসংখ্যা প্রায় ৭০০ জন। অনেক দ্বীপে হাসপাতাল না থাকায় জরুরি চিকিৎসা পেতে হলে ছয় ঘণ্টার ফেরি ভ্রমণ করে কাগোশিমা শহরে যেতে হয়।
ভূমিকম্পের কারণে স্থানীয় গেস্টহাউসগুলোও এখন আর নতুন পর্যটক নিচ্ছে না, কারণ এগুলোকে জরুরি আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি প্রশাসন সংবাদমাধ্যমকে অনুরোধ জানিয়েছে, যেন বাসিন্দাদের অহেতুক বিরক্ত না করা হয়।
এদিকে ধারাবাহিক এই ভূকম্পনের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়িয়েছে যে, ৫ জুলাই বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে। গুজবটির পেছনে রয়েছে ১৯৯৯ সালের একটি জাপানি কমিক বই, যেখানে লেখক রিও তাতসুকি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন এই নির্দিষ্ট তারিখে ভয়াবহ ভূমিকম্প আসবে।
এই 'ভবিষ্যদ্বাণী' দেশজুড়ে আলোচনার ঝড় তুলেছে। অনেক পর্যটক তাদের নির্ধারিত সফর বাতিল করছেন বলে জানায় স্থানীয় গণমাধ্যম।
উল্লেখ্য, ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ জাপানে বছরে গড়ে প্রায় ১,৫০০টি ভূমিকম্প ঘটে। তবে সবচেয়ে ভয়াবহ অভিজ্ঞতা ছিল ২০১১ সালের ভূমিকম্প ও সুনামি, যেখানে প্রাণ হারান ১৮ হাজারের বেশি মানুষ। সেই স্মৃতি এখনো অনেকের মনে তাজা।
সরকার আশঙ্কা করছে, ভবিষ্যতে ‘দ্য বিগ ওয়ান’ নামে পরিচিত একটি বড় ধরনের ভূমিকম্পে ৩ লাখেরও বেশি প্রাণহানি হতে পারে। এর পরিপ্রেক্ষিতে চলতি সপ্তাহেই সরকার নতুন বাধ নির্মাণ, আশ্রয়কেন্দ্র গঠনসহ আরও প্রস্তুতির কথা ঘোষণা করেছে।
তাদের সতর্ক বার্তা: “এখনো অনেক কিছু করণীয় বাকি।”
১৩২ বার পড়া হয়েছে