সর্বশেষ

জাতীয়

‘জুলাই সনদ’ এখনো অধরা: গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পরও আসেনি স্বীকৃতি

স্টাফ রিপোর্টার
স্টাফ রিপোর্টার

সোমবার, ৩০ জুন, ২০২৫ ৭:৩৯ অপরাহ্ন

শেয়ার করুন:
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে জুলাই মাস এখন এক নতুন তাৎপর্যের নাম। ২০২৪ সালের এই মাসেই সংঘটিত হয় ইতিহাসের এক রক্তাক্ত ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান, যার মাধ্যমে অবসান ঘটে দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনের।

পতন ঘটে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল একদলীয় শাসন, দমন-পীড়ন এবং অবিচারের।

কিন্তু আজ সেই অভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও এখনো ঘোষণা করা হয়নি 'জুলাই সনদ'—একটি রাষ্ট্রীয় দলিল যা হবে নতুন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক রূপরেখা। দাবি উঠেছে, এই সনদকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে জাতীয় দলিল হিসেবে ঘোষণা করা হোক।

আন্দোলনের পেছনের পটভূমি
২০২৪ সালের ৫ জুন হাইকোর্ট এক রায়ে ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের সরকারি পরিপত্রকে অবৈধ ঘোষণা করলে পুনর্বহাল হয় মুক্তিযোদ্ধা কোটা। এর প্রতিবাদে ৬ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু হয় ছাত্রদের আন্দোলন, যা পরে রূপ নেয় ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে’।

১ জুলাই রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে দাবি তোলেন কোটা সংস্কারের। মুখপাত্র নাহিদ ইসলাম আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। আন্দোলন ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। ১৬ জুলাই রংপুরে আন্দোলনরত ছাত্র আবু সাঈদের মৃত্যুর পর দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভ। ছাত্রদের সঙ্গে সাধারণ জনগণও আন্দোলনে শামিল হন।

এই ধারাবাহিক আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপ নেয় ৫ আগস্ট, যেদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করেন। এরপর অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয় নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে।

"জুলাই সনদ" কোথায়?
অভ্যুত্থানের পর ছাত্রনেতারা ঘোষণা দিয়েছিলেন, আন্দোলনের চেতনা ও ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা নিয়ে একটি সনদ বা ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হবে। কিন্তু এক বছর পেরিয়ে গেলেও সেই সনদ আজও প্রকাশিত হয়নি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র নাহিদ ইসলাম জানিয়েছেন, সরকার প্রতিশ্রুতি দিলেও এখনো পর্যন্ত কোনো সমন্বিত দলিল আসেনি। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, "সরকার যদি আর দেরি করে, তবে আমরা নিজেরাই ইশতেহার প্রকাশ করব। শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকেই ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করা হবে।"

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
ছাত্রদের এই দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেছে একাধিক রাজনৈতিক দল ও সংগঠন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, "জুলাই সনদ নিয়ে বিএনপি সবচেয়ে আন্তরিক। সাংবিধানিক সংস্কারসহ আমরা বেশিরভাগ প্রস্তাবে একমত। দেশের স্বার্থে আরও কোনো উত্তম প্রস্তাব এলে আমরা তা বিবেচনা করব।"

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, "জুলাই সনদ সরকারের প্রতিশ্রুতি। এটা বাস্তবায়ন করতে হবে। আমাদের সাত দফা দাবিতেও এই সনদের উল্লেখ রয়েছে।"

অরাজনৈতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি বলেন, "জুলাই ছিল নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন। ইনসাফভিত্তিক কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনের প্রত্যাশা ছিল সেই অভ্যুত্থানে। কিন্তু এখনো সেই স্বপ্ন অধরা।"

আগামী পদক্ষেপ?
৫ আগস্টের আগে ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণা করা না হলে ছাত্র ও নাগরিক সমাজ আবারও আন্দোলনে নামবে কি না, তা এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। দেশবাসীর প্রত্যাশা—যে রক্তের বিনিময়ে অর্জন, তা যেন প্রতিশ্রুতির ফাঁদে আটকে না থাকে। সময় এসেছে একটি সুস্পষ্ট পথনির্দেশনা ও ভবিষ্যৎ রূপরেখা জাতির সামনে উপস্থাপনের।

১৩১ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন
এলাকার খবর

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ সব খবর
জাতীয় নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন