ভারত স্থলপথে ৯ পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করায় দুশ্চিন্তায় বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা

রবিবার, ২৯ জুন, ২০২৫ ৭:৪৯ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
ভারত স্থলপথে বাংলাদেশ থেকে নতুন করে ৯ ধরনের পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করেছে। গত শুক্রবার (২৭ জুন) এক সরকারি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করে তা তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর করে দেশটি।
চলতি বছরের তিন মাসে এটি ভারতের তৃতীয় দফা অশুল্ক বাধা, যা বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের মধ্যে চরম উদ্বেগ তৈরি করেছে।
নতুন নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা পণ্যের মধ্যে অধিকাংশই পাট ও পাটজাত—যেমন কাঁচা পাট, পাটের সুতা, ফুড গ্রেড সুতা, ফ্ল্যাক্স সুতা, পাটের রোল, লিনেন কাপড় ও তুলা-মিশ্রিত বোনা কাপড় ইত্যাদি। যদিও এসব পণ্যের সমুদ্রপথে রপ্তানির সুযোগ রাখা হয়েছে, তবে তা কেবল ভারতের মুম্বাইয়ের নভোসেবা বন্দরের মাধ্যমে—যা তুলনামূলকভাবে খরচবহুল ও সময়সাপেক্ষ।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাব বলছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে এ ৯টি পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৮৮টি দেশে, যার মূল্য প্রায় ৬৬ কোটি ডলার বা ৭ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু ভারতেই রপ্তানি হয়েছে প্রায় ১৫ কোটি ডলারের পণ্য, যা মোট রপ্তানির ২৩ শতাংশ। ভারতের অবস্থান এই পণ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম গন্তব্য।
এর আগে ১৭ মে ও ৯ এপ্রিল আরও দুটি দফায় ভারত অশুল্ক বাধা আরোপ করে। ১৭ মে’র নিষেধাজ্ঞায় তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, আসবাব, ফল ও কোমল পানীয়সহ বেশ কিছু পণ্য স্থলপথে আমদানি বন্ধ করা হয়। আর ৯ এপ্রিল বাতিল করা হয় কলকাতা বিমানবন্দর হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির সুবিধা।
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ভারতে মোট রপ্তানি হয়েছিল ১৫৯ কোটি ডলারের। নতুন নিষেধাজ্ঞা এবং মে মাসের বিধিনিষেধ মিলিয়ে প্রায় ৬৫ কোটি ডলারের পণ্য—অর্থাৎ ভারতের বাজারে বাংলাদেশের মোট রপ্তানির প্রায় ৪০ শতাংশ—এখন সরাসরি বাধার মুখে পড়েছে।
নতুন নিষেধাজ্ঞায় বাংলাদেশের প্রায় ১১৭টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রপ্তানিকারী প্রতিষ্ঠান নারায়ণগঞ্জের পপুলার জুট এক্সচেঞ্জ, যারা ভারতে ১ কোটি ১৬ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে—যা তাদের মোট রপ্তানির ৫০ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে নরসিংদীর জনতা জুট মিলস, যারা ১ কোটি ৩ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে ভারতের বাজারে।
বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএসএ) সভাপতি তাপস প্রামাণিক বলেন, “ভারতের এ সিদ্ধান্ত রাজনৈতিকভাবে নেওয়া হয়েছে। ফলে কাঁচা পাট, পাট সুতা ও অন্যান্য পাটজাত পণ্যের রপ্তানি বড়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।” তিনি জানান, ৩০ জুন বিজেএসএ’র এক জরুরি বৈঠকে এই পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করা হবে এবং এরপর সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানানো হবে।
সমুদ্রপথে রপ্তানির বিকল্প থাকলেও তা কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাপস প্রামাণিক। তার ভাষায়, “নভোসেবা বন্দরের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গে পণ্য পৌঁছানো প্রায় অসম্ভবের নামান্তর। সরকারের উচিত ভারতের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে চাপ প্রয়োগ করা।”
বিশ্লেষকদের মতে, এই ধারাবাহিক নিষেধাজ্ঞা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্কের ওপর দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে পাট খাত, যা বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের গুরুত্বপূর্ণ উৎস, তা বড় ধাক্কার মুখে পড়ছে। এমন প্রেক্ষাপটে কূটনৈতিক উদ্যোগ ও বিকল্প বাজার খুঁজে বের করাই এখন সময়ের দাবি।
১২৫ বার পড়া হয়েছে