বেতন বছরে সাড়ে তিন কোটি, সিলিকন ভ্যালিতে চাকরি ইরফানের

রবিবার, ২৯ জুন, ২০২৫ ৭:০৪ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
বিশ্বের অন্যতম প্রযুক্তিকেন্দ্র যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) কোম্পানি অ্যাস্টেরা ল্যাবসে চাকরি পেয়েছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) প্রাক্তন শিক্ষার্থী মো. ইরফান উদ্দীন।
ইলেকট্রিক্যাল প্রোডাক্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে আগামী ৩০ জুন (সোমবার) প্রতিষ্ঠানটিতে যোগ দিচ্ছেন তিনি।
বছরে প্রায় ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা বেতন ছাড়াও সাইনিং বোনাস হিসেবে ইরফান পাচ্ছেন প্রায় ৩০ লাখ টাকা (২৫ হাজার মার্কিন ডলার)। বেতনের পাশাপাশি রয়েছে স্টক, বীমাসহ নানা ধরনের কর্পোরেট সুযোগ-সুবিধা।
ইরফান উদ্দীন জানান, অ্যাস্টেরা ল্যাবসে চাকরি পেতে তাকে ৯ ধাপের ইন্টারভিউর মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। এর মধ্যে ৭টি টানা ৫ ঘণ্টাব্যাপী অনসাইট টেকনিক্যাল ইন্টারভিউ ছিল ক্যালিফোর্নিয়ায়। এই ইন্টারভিউয়ের প্রস্তুতির জন্য মানসিক দৃঢ়তা ও অধ্যবসায় ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে জানান তিনি।
চাকরি প্রাপ্তির গল্প প্রসঙ্গে ইরফান বলেন, “জানুয়ারি থেকে চাকরি আবেদনের প্রক্রিয়া শুরু করেছিলাম। প্রতিদিন ক্লাস, গবেষণা ও অন্যান্য কাজের ফাঁকে অন্তত দুই ঘণ্টা সময় দিতাম আবেদন তৈরির পেছনে। প্রথমে সাড়া না পেয়ে হতাশ হলেও হাল ছাড়িনি।”
তিনি আরও জানান, মে মাসের মাঝামাঝি টেক্সাসের একটি কোম্পানি থেকে প্রথম চাকরির অফার পান। এরপর ২১ মে একই দিনে আরও দুটি প্রতিষ্ঠানের—ফক্সকন ও অ্যাস্টেরা ল্যাবসের—চাকরির প্রস্তাব পান। শেষ পর্যন্ত অ্যাস্টেরাকেই বেছে নেন তিনি।
চুয়েট থেকে শুরু, সিলিকন ভ্যালিতে গন্তব্য
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির ধর্মপুর গ্রামের সন্তান ইরফান এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫.০০ অর্জন করেন। এরপর চুয়েট থেকে ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন ২০১৬ সালে। যদিও স্নাতকে তার সিজিপিএ ছিল মাত্র ২.৯৮।
সিজিপিএ তুলনামূলক কম হলেও ইরফান যুক্তরাষ্ট্রে ফুল ফান্ডিং স্কলারশিপে সুযোগ পান। ২০২৩ সালের আগস্টে ইউনিভার্সিটি অব ওয়াইয়োমিংয়ে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে মাস্টার্স করতে যান। জিআরই পরীক্ষায় ৩৩১ স্কোর করে স্কলারশিপ পাওয়ার পথ মসৃণ করেন।
“কম সিজিপিএ ও গবেষণাপত্র না থাকায় শুরুতে হতাশ হয়েছিলাম,” বলেন ইরফান, “তাই জিআরই পরীক্ষায় ভালো করার সিদ্ধান্ত নিই। জিপিএ ছাড়াও ভালো স্কোর, অভিজ্ঞতা ও দৃঢ় মনোভাব দিয়েই সুযোগ তৈরি করা সম্ভব।”
চুয়েট থেকে পাস করার পর ইরফান দেশে কিছুদিন চাকরির খোঁজ করেন। পরে ওয়ালটনে চাকরি পান এবং সেখানে কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন করেন, যা তাকে যুক্তরাষ্ট্রে পেশাগতভাবে শক্ত অবস্থানে যেতে সহায়তা করে।
যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা ও চাকরি প্রত্যাশী তরুণদের উদ্দেশে ইরফান বলেন, “আমার অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে, বাংলাদেশের প্রাসঙ্গিক কাজের অভিজ্ঞতা বিদেশে চাকরি পেতে কাজে আসে। এছাড়া আবেদন করার সময় বেতন নিয়ে বেশি ভয় পাওয়ার দরকার নেই। আমি শিখেছি, চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান থেকেই বেতন কাঠামো জানতে চাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।”
তিনি আরও বলেন, “সিলিকন ভ্যালিতে কাজ করাটা আমার বহুদিনের স্বপ্ন ছিল। অবশেষে সেটি বাস্তব হয়েছে। আমি শুধু বলব, কেউ যদি পরিশ্রম, কৌশল আর ধৈর্য ধরে এগিয়ে যায়, তাহলে সুযোগ একসময় আসবেই।”
১২৯ বার পড়া হয়েছে