যুদ্ধবাজ ইসরাইল: দুই বছরে পাঁচ দেশে ৩৫ হাজারের বেশি হামলা

শুক্রবার, ২৭ জুন, ২০২৫ ২:৫৩ অপরাহ্ন
শেয়ার করুন:
ইসরাইল গত দুই বছরে মধ্যপ্রাচ্যের পাঁচটি দেশে ৩৫ হাজারের বেশি হামলা চালিয়েছে—এমন এক ভয়াবহ ও নজিরবিহীন সামরিক তৎপরতার মুখে এখন পুরো অঞ্চল।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই হামলার পরিধি ও তীব্রতা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। গাজা, লেবানন, সিরিয়া, ইয়েমেন এবং ইরানে ইসরাইলের বিমান হামলা, ড্রোন আক্রমণ, আর্টিলারি শেলিং এবং ভূমি অভিযান চলেছে অবিরাম, যা লক্ষাধিক মানুষের জীবন ও জীবিকা বিপর্যস্ত করেছে এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত ইসরাইলি বাহিনী পাঁচটি দেশে—গাজা ও পশ্চিম তীর (অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চল), লেবানন, সিরিয়া, ইরান ও ইয়েমেন—প্রায় ৩৫,০০০টি হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে গাজা ও পশ্চিম তীরে ১৮,০০০-এর বেশি, লেবাননে ১৫,০০০-এর বেশি, সিরিয়ায় ৬০০-এর বেশি এবং ইরান ও ইয়েমেনে প্রায় ১০০টি হামলা নথিবদ্ধ হয়েছে। এই সংখ্যা ইসরাইলকে সাম্প্রতিক সময়ে একক দেশ হিসেবে সবচেয়ে বেশি দেশে হামলা চালানোর রেকর্ডধারী করেছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরাইল-হামাস যুদ্ধের পর থেকে ইসরাইলের সামরিক অভিযান ক্রমশ প্রসারিত হয়েছে। শুধু গাজা নয়, লেবাননের হিজবুল্লাহর ঘাঁটি, সিরিয়ায় ইরানি মিলিশিয়া ও সামরিক স্থাপনা, ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহীদের লক্ষ্য করে এবং ইরানে সরাসরি বিমান হামলা চালানো হয়েছে। ২০২৪ সালের ২৬ অক্টোবর ইসরাইল ইরানে তিনটি তরঙ্গে ২০টি স্থানে ব্যাপক বিমান হামলা চালায়, যা ইরান-ইরাক যুদ্ধের পর থেকে ইরানে সবচেয়ে বড় বিদেশি আক্রমণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এতে ইরানের বায়ুসেনা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, ড্রোন কারখানা ও ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্র ধ্বংস হয়েছে।
শুধু আক্রমণের সংখ্যাই নয়, হামলার পরিধি ও গভীরতাও অভূতপূর্ব। ইসরাইলি বিমানবাহিনী সিরিয়ায় ৫৫০ কিলোমিটার, ইরানে ১,৫০০ থেকে ২,০০০ কিলোমিটার গভীরে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে। একক দুই বছরে এত ব্যাপক ও বহুমুখী হামলা বিশ্বে খুব কম দেশই চালিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া বা ফ্রান্স বিভিন্ন সময়ে বহু দেশে হামলা চালালেও, একই সময়ে এত দেশে এত তীব্র হামলা চালানোর নজির সাম্প্রতিক ইতিহাসে নেই।
ইসরাইলের এই হামলার প্রভাবে আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি মারাত্মকভাবে অবনতি হয়েছে। লেবাননে হাজার হাজার বেসামরিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, গাজায় মানবিক সংকট তীব্র হয়েছে এবং সিরিয়া ও ইয়েমেনে সামরিক স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে। ইসরাইলের এই আগ্রাসী নীতির কারণে বিশ্বব্যাপী সমালোচনা ও উদ্বেগ বেড়েছে। ইসরাইলকে এখন বিশ্বের অন্যতম যুদ্ধবাজ দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, যার সামরিক কর্মকাণ্ড আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি তৈরি করেছে।
১১৩ বার পড়া হয়েছে