সর্বশেষ

মতামত

ইরানের ফোর্দো পরমাণু স্থাপনা ধ্বংসে মার্কিন B-2 বোমারু বিমানের চ্যালেঞ্জ

মনজুর এহসান চৌধুরী 
মনজুর এহসান চৌধুরী 

বৃহস্পতিবার , ১৯ জুন, ২০২৫ ১২:২৬ অপরাহ্ন

শেয়ার করুন:
তেল আবিবের দাবি অনুযায়ী, ইরানের ফোর্দো পরমাণু স্থাপনা ধ্বংসের জন্য মার্কিন B-2 স্পিরিট স্টিলথ বোমারু বিমানের ব্যবহার অপরিহার্য।

এই স্থাপনা ইরানের ধর্মীয় নগরী কোমের নিকটে পাহাড়ের ৮০-৯০ মিটার (প্রায় ৩০ তলা) গভীরে অবস্থিত, যা প্রচলিত ইসরায়েলি অস্ত্র দ্বারা আঘাতহীন। তবে এই মিশন বাস্তবায়নে B-2-এর সামনে দাঁড়িয়ে আছে ইরানের অত্যাধুনিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যা এই অভিযানকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।

B-2 স্পিরিটের সামর্থ্য ও সীমাবদ্ধতা•••••

 

স্টিলথ প্রযুক্তি: B-2 রাডার ক্রস-সেকশন মাত্র ০.১ বর্গমিটার, যা এটিকে প্রচলিত রাডারে প্রায় অদৃশ্য করে তোলে। তবে এটি শুধু X-ব্যান্ড রাডার এড়াতে সক্ষম; ইরানের VHF/UHF মাল্টি-ব্যান্ড রাডার (যেমন: Ghadir, Kavosh) একাধিক ফ্রিকোয়েন্সিতে স্ক্যান করে স্টিলথ বিমান শনাক্ত করতে পারে।

অস্ত্রভাণ্ডার: B-2 প্রতি মিশনে দুটি GBU-57 Massive Ordnance Penetrator (MOP) বহন করতে পারে, যা ৬০,০০০ পাউন্ড ওজনের “বাঙ্কার বাস্টার” বোমা। এটি ২০০ ফুট গভীর পর্যন্ত খনন করে শক্তিশালী কংক্রিট ভেদ করতে পারে।

 

পরিসীমা: ডিয়েগো গার্সিয়া ঘাঁটি (ইরান থেকে ৪,০০০ কিমি দূরে) থেকে উড্ডয়ন করে B-2-এর একক ফুয়েলিংয়ে ফোর্দোতে পৌঁছানো সম্ভব।

ইরানের প্রতিরক্ষা স্তর: কেন B-2 ধরা পড়তে পারে•••••••
ইরান ফোর্দো রক্ষায় তিনস্তরবিশিষ্ট প্রতিরক্ষা মোতায়েন করেছে।

 

দূরপাল্লার ব্যবস্থা: Bavar-373 (সর্বোচ্চ ২০০ কিমি পাল্লা), যা S-300 এবং আমেরিকান প্যাট্রিয়ট ব্যবস্থার চেয়ে উন্নত। এটি একসাথে ৬০টি লক্ষ্য ট্র্যাক ও ৬টি ধ্বংস করতে পারে।

ইলেকট্রনিক যুদ্ধ (EW) ক্ষমতা: ইরান “শিল্ড অফ ভেলায়েত” ড্রিলের মাধ্যমে GPS জ্যামিং, রাডার বিকৃতি ও কমিউনিকেশন বিঘ্নের দক্ষতা অর্জন করেছে। B-2-এর লেজার গাইডেন্স সিস্টেম এতে বিকল হতে পারে।

 

হাইপারসনিক হুমকি: Fattah ক্ষেপণাস্ত্র (১৫ মাখ গতি) B-2-এর মতো ধীরগতির বোমারু বিমান মোকাবেলায় কার্যকর।

 

গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা: B-2 তাপীয় স্বাক্ষর (IR signature) উল্লেখযোগ্য মাত্রায় উৎপাদন করে, বিশেষ করে উচ্চ উচ্চতায় উড্ডয়নকালে। ইরানের থার্মাল সেন্সর ও ইনফ্রারেড ট্র্যাকিং সিস্টেম (যেমন: Nazir রাডার) এতে সনাক্তকরণ সম্ভব করে তোলে।

ফোর্দো ধ্বংসের বাস্তবতা••••••

 

GBU-57-এর সীমাবদ্ধতা: ফোর্দোর গভীরতা ও শক্তি (পাহাড়ের প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা) বিবেচনায় একটি MOP বোমা সম্পূর্ণ ধ্বংসের নিশ্চয়তা দিতে পারে না। বিশেষজ্ঞরা মত দেন যে অনুক্রমিক আঘাত (প্রথম বোমা দিয়ে প্রবেশপথ খুলে দ্বিতীয়টি নিক্ষেপ) প্রয়োজন।

 

মিশন সফলতার হার: B-2-কে লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য ইরানের ৩২০ কিমি পাল্লার রাডার নেটওয়ার্ক এড়িয়ে চলতে হবে, যা EW বিকলতার পরিস্থিতিতে কঠিন।

কৌশলগত ঝুঁকি••••••

 

প্রতিশোধমূলক হামলা: ইরান মার্কিন ঘাঁটি, সমুদ্রপথ (হরমুজ প্রণালী) বা সাইবার হামলার মাধ্যমে পাল্টা জবাব দিতে পারে।

 

আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা: সরাসরি মার্কিন হস্তক্ষেপ সৌদি আরব, তুরস্কের মতো রাষ্ট্রগুলোর পরমাণু অস্ত্র অর্জনের দিকে ধাবিত করতে পারে।

 

ব্যর্থতার ফলাফল: আংশিক ধ্বংস ইরানকে পরমাণু অস্ত্র উন্নয়নে উৎসাহিত করবে, এমনকি “ব্রেকআউট” ক্ষমতা অর্জনে ত্বরান্বিত করবে।

শেষ কথা•••

 

ফোর্দো ধ্বংসের মিশন কৌশলগত ও প্রযুক্তিগতভাবে সম্ভব হলেও, ইরানের অপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা B-2-এর সফলতাকে অনিশ্চিত করে তুলেছে। GBU-57 বোমার সীমিত ভেদন ক্ষমতা, ইরানের রাডার নেটওয়ার্কের ব্যাপকতা এবং ইলেকট্রনিক যুদ্ধের ঝুঁকি এই অভিযানকে “হাই-স্টেকস গেম”-এ পরিণত করেছে। ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্ত কেবল ফোর্দোই নয়, সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।

 

লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট

১২৪ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
মতামত নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন