ছয় দিনের সংঘর্ষে উত্তপ্ত ইরান-ইসরায়েল, নিহত ও আহতের সংখ্যা বাড়ছে

ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের ধারাবাহিক বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইরানে অন্তত ২২৪ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক এবং কিছু শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী রয়েছেন। মানবাধিকার সংস্থা HRANA জানিয়েছে, ইরানে নিহতের সংখ্যা আরও বেশি—৪০৮ জন, যার মধ্যে ৯২ জন সামরিক সদস্য, ১৯৯ জন বেসামরিক এবং ১১৭ জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি। আহতের সংখ্যা সরকারি হিসাবে ১,২৭৭ জনেরও বেশি, যাদের অনেকেই নারী ও শিশু।

ইরানের পাল্টা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় ইসরায়েলে অন্তত ২৪ জন নিহত হয়েছেন বলে দেশটির জাতীয় জরুরি পরিষেবা ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে। আহত হয়েছেন ৫৯২ জনের বেশি, যাদের মধ্যে ১০ জনের অবস্থা গুরুতর। ইরানের হামলায় ইসরায়েলের তেল আবিব, হাইফা, রামাত গানসহ বিভিন্ন শহরে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।

ইসরায়েলের হামলায় ইরানের বিপ্লবী গার্ড কোরের (আইআরজিসি) গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি, উপপ্রধান হাসান মোহাক্কিক, জেনারেল মোহসেন বাঘেরীসহ অন্তত ছয়জন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। এছাড়া, ১৪ জন পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন বলে ইরানি রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম ও আন্তর্জাতিক সূত্র জানিয়েছে। ইসরায়েলি হামলায় নাতানজ পারমাণবিক স্থাপনা, ইসফাহানের ইউরেনিয়াম রূপান্তর কেন্দ্র, তেহরান ও কেরমানশাহর সামরিক ঘাঁটি, গবেষণা কেন্দ্র এবং সরকারি ভবন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাধারণ নাগরিকদের বাড়িঘর, হাসপাতাল, সম্প্রচার কেন্দ্র ও অবকাঠামোতেও ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে।

ইরানের পাল্টা হামলায় ইসরায়েলের কেন্দ্র ও উত্তরের শহরগুলোতে বহু ভবন, আবাসিক এলাকা ও অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তেল আবিবে একটি আধুনিক আবাসিক ভবন সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে এবং আশপাশের বেশ কয়েকটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রামাত গান এলাকায় নয়টি ভবন পুরোপুরি ধ্বংস এবং শতাধিক ভবন আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কমপ্লেক্সেও ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ক্ষতি হয়েছে। ইরান দাবি করেছে, তারা ইসরায়েলের ২৮টি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে, যদিও ইসরায়েল এই দাবি অস্বীকার করেছে।

ইরান ও ইসরায়েল দুই পক্ষই শীর্ষ সামরিক ও বৈজ্ঞানিক নেতৃত্বকে লক্ষ্যবস্তু করেছে। ইরান অপারেশন ট্রু প্রমিস থ্রি অভিযানে ইসরায়েলের দিকে ৩৭০টির বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে। সংঘর্ষের ফলে উভয় দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ও উদ্বেগ বিরাজ করছে এবং আন্তর্জাতিক মহল দ্রুত শান্তি ও আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে।

গত ৬ দিনের সংঘর্ষে ইরানে নিহত হয়েছেন অন্তত ২২৪ জন (কিছু সূত্রে ৪০০-এর বেশি), আহত হয়েছেন ১,২০০-এর বেশি মানুষ। ইসরায়েলে নিহত ২৪ জন, আহত ৫৯২ জনের বেশি। দুই দেশের সামরিক, বৈজ্ঞানিক ও বেসামরিক অবকাঠামোতে বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। পরিস্থিতি এখনও উত্তপ্ত এবং নতুন করে হামলা-পাল্টা হামলার আশঙ্কা রয়েছে।