সর্বশেষ

আন্তর্জাতিক

ইসরাইলকে বিশাল অস্ত্র চালান দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ‘সম্পৃক্ততা নেই’ দাবি: ইরানের পাশে রাশিয়া-চীন: বিশ্ববাজারে তেলের দাম উর্ধ্বগতি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

শুক্রবার, ১৩ জুন, ২০২৫ ৮:৫৭ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
ইসরাইল-ইরান সাম্প্রতিক সংঘাত ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা, ইরানের কৌশলগত মিত্র ও বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারে ব্যাপক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।


মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একদিকে দাবি করেছেন, ইরানে ইসরাইলি হামলার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সরাসরি সম্পৃক্ততা নেই; অন্যদিকে, গত কয়েক সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে বিপুল সামরিক অস্ত্র ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম পাঠিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ইরানের প্রধান সমর্থক হিসেবে রাশিয়া ও চীনের সক্রিয় অবস্থান এবং তেলের বাজারে ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধি বৈশ্বিক উদ্বেগ বাড়িয়েছে।


বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউজে এক ব্রিফিংয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, “ইসরাইলের হামলার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র জড়িত নয়, আমরা সংঘাত এড়াতে চাই।” তিনি আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিক সমাধান চায় এবং মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন নাগরিকদের নিরাপত্তা সবার আগে।

তবে বাস্তবে, চলতি বছরের শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে ৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি সামরিক সহায়তা, আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র, বাঙ্কার-বাস্টার বোমা, আর্মার্ড ভেহিকল, গোলাবারুদ ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পাঠিয়েছে। সম্প্রতি ইসরাইলের আয়রন ডোম ও ডেভিড’স স্লিং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার স্টকও পূরণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।


ইরানের ওপর নতুন করে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা ও সামরিক চাপের মুখে দেশটির প্রধান কৌশলগত মিত্র হিসেবে রাশিয়া ও চীন সক্রিয়। রাশিয়া ও চীন ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে “ইরানের অধিকার” সমর্থন করছে এবং নতুন নিষেধাজ্ঞা এড়াতে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছে। চীন ইরানের প্রধান তেল ক্রেতা, দেশটির মোট রপ্তানি তেলের ৯০% চীনেই যায়, যা ইরানের অর্থনীতির লাইফলাইন। রাশিয়া ইরানের সঙ্গে সামরিক, জ্বালানি ও প্রযুক্তি বিনিয়োগ বাড়িয়েছে এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত অবকাঠামো পুনর্গঠনে সহায়তা করছে। ইরান, রাশিয়া ও চীন—তিন দেশের মধ্যে কৌশলগত সহযোগিতা আরও গভীর হচ্ছে, বিশেষ করে পশ্চিমা চাপ ও সম্ভাব্য নতুন নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষাপটে।


ইসরাইল-ইরান সংঘাতের পরপরই বিশ্ববাজারে তেলের দাম হু-হু করে বেড়েছে। ব্রেন্ট ক্রুডের দাম একদিনেই ৯% পর্যন্ত বেড়ে ৭৮ ডলার ছুঁয়েছে, যা সাম্প্রতিক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃদ্ধি। মার্কিন WTI ক্রুডও ৮-৯% বেড়ে ৭৪ ডলারের কাছাকাছি পৌঁছেছে। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লে এবং ইরান স্ট্রেইট অব হরমুজ বন্ধ করে দিলে তেলের দাম ১২০ ডলার পর্যন্ত উঠতে পারে। এই উত্তেজনায় বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি ও জ্বালানি সংকটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, কারণ স্ট্রেইট অব হরমুজ দিয়ে বিশ্বের ২০% তেল পরিবাহিত হয়।


ইসরাইল-ইরান সংঘাত ঘিরে মধ্যপ্রাচ্যে যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে, তা শুধু এই দুই দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই—বরং বৈশ্বিক রাজনীতি, অর্থনীতি ও নিরাপত্তার ওপরও গভীর প্রভাব ফেলছে। যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যে সরাসরি জড়িত না থাকার দাবি করলেও, ইসরাইলকে সামরিক সহায়তা দিয়ে সংঘাতের মাত্রা বাড়িয়েছে। অপরদিকে, ইরানকে রাশিয়া ও চীনের কৌশলগত সমর্থন আরও শক্তিশালী করেছে, ফলে বিশ্ব নতুন মেরুকরণের দিকে এগোচ্ছে।

এই সংঘাতের কারণে বিশ্ববাজারে তেলের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে, অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও মুদ্রাস্ফীতির ঝুঁকি বেড়েছে। আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক রাজনীতিতে নতুন জোট, প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও নিরাপত্তা উদ্বেগ আরও স্পষ্ট হয়েছে।


সব মিলিয়ে, ইসরাইল-ইরান সংঘাত শুধু একটি সামরিক দ্বন্দ্ব নয়, এটি বিশ্বশক্তির সংঘাত, অর্থনৈতিক চাপ এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতির নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তনশীল, এবং ভবিষ্যতে আরও বড় পরিণতি বয়ে আনতে পারে।

১৩৫ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
আন্তর্জাতিক নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন