যুক্তরাজ্যে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সম্পত্তি জব্দ

বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে নেওয়া এই পদক্ষেপের ফলে তিনি এসব সম্পদ আর বিক্রি বা হস্তান্তর করতে পারবেন না বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার তদন্তকারী ইউনিট।

বুধবার (১১ জুন) প্রকাশিত আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, এনসিএ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “চলমান সিভিল তদন্তের অংশ হিসেবে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বেশ কয়েকটি সম্পত্তি জব্দ করার আদেশ পেয়েছে।” বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যুক্তরাজ্যের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছিল। সেই অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

তদন্তে জানা গেছে, সাইফুজ্জামান চৌধুরীর নামে যুক্তরাজ্যে ৩৩৬টি বাড়ি ও ফ্ল্যাট, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২২৮টি, যুক্তরাষ্ট্রে ৭টি এবং আরও কয়েকটি দেশে সম্পদ রয়েছে। এসব সম্পদের মোট মূল্য ১ হাজার ২২০ কোটি টাকার বেশি বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। লন্ডনের অভিজাত সেন্ট জনস উড এলাকায় তার একটি বিলাসবহুল বাড়ি রয়েছে, যার মূল্য ১ কোটি ১০ লাখ পাউন্ড (প্রায় ১৪.৮ মিলিয়ন ডলার)।

সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বাংলাদেশ থেকে বৈদেশিক লেনদেনের সীমা অতিক্রম করে বিপুল অর্থ পাচার করেছেন এবং বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। বাংলাদেশের ট্যাক্স রিটার্নে এসব বিদেশি সম্পদের কোনো তথ্য নেই। ২০১৬ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৬২০টি বাড়ি কিনেছেন বলে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) জানিয়েছে। এসব সম্পদ ও অর্থ পাচার সংক্রান্ত তদন্ত বাংলাদেশেও চলছে।

সাইফুজ্জামান চৌধুরী ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং আওয়ামী লীগের অন্যতম সদস্য। গত বছরের জুলাই মাসে বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলনে সহিংস দমন-পীড়নের পর শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে গেলে, নতুন প্রশাসন সাইফুজ্জামানের সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় যুক্তরাজ্যে তার সম্পত্তি জব্দের ঘটনা ঘটলো।

সাইফুজ্জামান চৌধুরী দাবি করেছেন, তার সম্পত্তি বৈধ ব্যবসা থেকে অর্জিত এবং তিনি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার। তবে আল জাজিরার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বাংলাদেশি আইনে একজন নাগরিক বছরে সর্বোচ্চ ১২ হাজার ডলার বিদেশে নিতে পারেন, অথচ তিনি শত কোটি ডলার বিদেশে বিনিয়োগ করেছেন।

এর আগে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ আহমেদ সালমান এফ রহমান ও তার চাচাতো ভাই আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের প্রায় ৯ কোটি পাউন্ডের সম্পত্তি জব্দ করেছিল এনসিএ।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের দুর্নীতিবিরোধী চলমান অভিযানে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর বিপুল বিদেশি সম্পত্তি জব্দের ঘটনা নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তদন্ত চলছে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও আসেনি।