সর্বশেষ

জাতীয়

ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে লন্ডনে বিক্ষোভ: পলাতক মন্ত্রী এমপি নেতাদের আয়েশি জীবন

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

বুধবার, ১১ জুন, ২০২৫ ১:৪৫ অপরাহ্ন

শেয়ার করুন:
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সংকট, প্রশাসনিক দুর্বলতা ও নেতৃত্ব পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে লন্ডনে ড. ইউনূসের সফর ঘিরে আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

দীর্ঘদিনের এককেন্দ্রিক শাসন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার দুর্বলতার কারণে দেশের রাজনীতি গভীর অস্থিরতায় পড়েছে, যার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের একাংশ বিদেশে পালিয়ে গিয়ে প্রবাসে সংগঠিত হচ্ছে এবং নতুন সরকারের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ঠেকাতে সক্রিয় প্রচারণা চালাচ্ছে।

 

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের যুক্তরাজ্য সফরকে ঘিরে লন্ডনে আওয়ামী লীগ ও তাদের যুক্তরাজ্য শাখা ব্যাপক প্রতিবাদ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। মূলত দুইটি প্রধান স্থানে এই বিক্ষোভ পালন করছে আওয়ামী লীগ ও তাদের যুক্তরাজ্য শাখা। ১১ জুন (বুধবার) সকাল ১০:৩০ থেকে ১২:৩০ পর্যন্ত চ্যাথাম হাউসের সামনে এবং ১২ জুন (বৃহস্পতিবার) দিনভর ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে।

 

এছাড়া ড. ইউনূস অবস্থানরত ডরচেস্টার হোটেলের সামনেও শতাধিক আওয়ামী লীগপন্থী ব্রিটিশ বাংলাদেশি ও সংগঠনের নেতাকর্মীরা জড়ো হয়ে “গো ব্যাক” স্লোগান দেন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, আইনশৃঙ্খলার অবনতির অভিযোগ তোলেন।

 

বিক্ষোভের নেতৃত্বে রয়েছেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা এবং বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আসা সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও কেন্দ্রীয় নেতারা। উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে রয়েছেন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সুনামগঞ্জ-১ আসনের সাবেক এমপি রণজিত সরকার, হবিগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক এমপি ও সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিধান কুমার সাহা, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আবদুর রহমান, সাবেক প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী, সাবেক নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, আওয়ামী লীগের নেতা ও সাবেক হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, এছাড়া যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফ।

 

৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগের বহু নেতা-মন্ত্রী-এমপি দেশ ছেড়ে লন্ডন, কলকাতা, নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন দেশে পালিয়ে গেছেন। এর মধ্যে লন্ডনে অবস্থানরত উল্লেখযোগ্য পলাতক নেতারা হচ্ছে, ড. হাছান মাহমুদ (সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী), সাইফুজ্জামান চৌধুরী (সাবেক ভূমিমন্ত্রী), শ ম রেজাউল করিম (সাবেক মন্ত্রী), শফিকুর রহমান চৌধুরী (সাবেক প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী), খালিদ মাহমুদ চৌধুরী (সাবেক নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী), আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন (সাবেক হুইপ), আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী (সাবেক মেয়র, সিলেট), রণজিত সরকার (সাবেক এমপি, সুনামগঞ্জ-১), বিধান কুমার সাহা (সাবেক এমপি, হবিগঞ্জ-৩)। এছাড়া ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতা-কর্মীও লন্ডনে আশ্রয় নিয়েছেন।

 

বিক্ষোভে আওয়ামী লীগের নেতারা ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারকে অবৈধ ও অনির্বাচিত দাবি করছেন। তারা অভিযোগ করছেন, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ, মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে এবং বিরোধী দল দমন চলছে। যুক্তরাজ্য সরকার ও রাজাকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানানো হয়েছে, যেন তারা ড. ইউনূসের সরকারকে স্বীকৃতি না দেন।বিক্ষোভকারীরা দাবি করছেন, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের কোটি কোটি সমর্থক গৃহহীন, মিথ্যা মামলার শিকার এবং দেশ থেকে বিতাড়িত।

 

এসব পলাতক নেতা-মন্ত্রী-এমপি বিদেশে বিলাসী জীবনযাপন করছেন। লন্ডনের অভিজাত এলাকায় বাড়ি, গাড়ি, ব্যক্তিগত কর্মী ও চিকিৎসক নিয়ে তারা আয়েশি জীবন কাটাচ্ছেন। অনেকেরই যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশে বিপুল সম্পদ রয়েছে।

 

লন্ডনে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ এবং পলাতক নেতাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটের বহিঃপ্রকাশ। দীর্ঘদিন ধরে চলা এককেন্দ্রিক শাসন, প্রশাসনিক দুর্বলতা, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সীমাবদ্ধতা এবং আন্তর্জাতিক চাপ—সব মিলিয়ে দেশের রাজনীতিতে গভীর অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের একাংশ বিদেশে পালিয়ে গিয়ে প্রবাসে সংগঠিত হচ্ছে এবং নতুন সরকারের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ঠেকাতে সক্রিয় প্রচারণা চালাচ্ছে।

 

এটা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় বাংলাদেশের রাজনীতিতে মেরুকরণ, দলীয় প্রতিহিংসা ও নেতৃত্বের দায়মুক্তি সংস্কৃতি কতটা গভীর। দেশের অভ্যন্তরীণ সংকট এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রতিফলিত হচ্ছে। সংকট উত্তরণের জন্য প্রশাসনিক সংস্কার, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং একটি অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিকল্প নেই। গণতান্ত্রিক চর্চা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক পরিবেশ গড়ে তুলতে না পারলে, এ ধরনের সংকট ভবিষ্যতেও বারবার ফিরে আসবে।

১৩০ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
জাতীয় নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন