ভুল রেফারিংয়ে হতাশ দর্শক, উত্তেজনাকর খেলায় বাংলাদেশের হার

ম্যাচটি ঘিরে জাতীয় স্টেডিয়ামে ছিল দর্শকের উপচে পড়া ভিড়, উন্মাদনা ও চূড়ান্ত উত্তেজনা। বাংলাদেশ ম্যাচের বড় অংশে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেললেও, সুযোগ নষ্ট ও রক্ষণের কিছু ভুলে কাঙ্ক্ষিত ফল পায়নি।

প্রথমার্ধে সিঙ্গাপুরের ফরোয়ার্ড সং উই ইয়াং গোল করে দলকে এগিয়ে নেন। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ইসকান ফান্দি ব্যবধান দ্বিগুণ করেন।

বাংলাদেশের হয়ে রাকিব হোসেন একটি দুর্দান্ত গোল করে ব্যবধান কমান এবং ম্যাচে উত্তেজনা ফেরান। শেষ মুহূর্তে বাংলাদেশ আক্রমণাত্মক খেললেও সিঙ্গাপুরের রক্ষণভাগ ও গোলরক্ষক দৃঢ়ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ম্যাচের শেষ দিকে বাংলাদেশ বেশ কয়েকটি সুযোগ তৈরি করলেও গোলের দেখা পায়নি।

৪৪ মিনিটে ইউ ওয়াই সং এবং ৫৮ মিনিটে ইখসান ফান্দি গোল করে সিঙ্গাপুরকে এগিয়ে দেন।

ম্যাচের শুরু থেকেই বাংলাদেশ আক্রমণে এগিয়ে ছিল। ফাহামিদুল ইসলাম ও শাকিল আহাদ একাধিক সুযোগ তৈরি করলেও রাকিব হোসেন তা কাজে লাগাতে পারেননি। পাল্টা আক্রমণে সিঙ্গাপুরও দুই-একটি সুযোগ তৈরি করে। ৪৪ মিনিট পর্যন্ত দুই দলই গোলের দেখা পায়নি। ৪৪ মিনিটে সিঙ্গাপুরের সং উই ইয়াং ডান দিক থেকে বল পেয়ে বাঁ পাশে শট নেন, বাংলাদেশের মিডফিল্ডার হামজা চৌধুরী গোল বাঁচানোর চেষ্টা করলেও পারেননি। ফলে প্রথমার্ধের শেষ মুহূর্তে সিঙ্গাপুর ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।

বিরতির পরও বাংলাদেশ আক্রমণাত্মক ছিল, কিন্তু ৫৮ মিনিটে সিঙ্গাপুরের ফরোয়ার্ড ইকসান ফান্দি বক্সের ভেতর থেকে গোল করে ব্যবধান বাড়ান। বাংলাদেশের গোলরক্ষক মিতুল মারমা প্রথম শট ঠেকাতে পারলেও, ফিরতি বলে ফান্দি সহজেই গোল করেন। এ সময় রক্ষণভাগের ভুলও লক্ষ্য করা যায়।

৬৭ মিনিটে বাংলাদেশের হয়ে রাকিব হোসেন দুর্দান্ত এক গোল করেন। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা হামজা চৌধুরীর বাড়ানো বল থেকে রাকিব সিঙ্গাপুরের গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন। গোলের পর বাংলাদেশ সমতা ফেরাতে মরিয়া হয়ে ওঠে এবং একের পর এক আক্রমণ চালাতে থাকে। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বাংলাদেশ গোলের জন্য লড়াই চালালেও, সিঙ্গাপুরের রক্ষণভাগ ও গোলরক্ষক দৃঢ়ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ফলে ম্যাচ শেষ হয় ২-১ গোলে সিঙ্গাপুরের জয় লাভ করে।

ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশের ফরোয়ার্ড রাকিব হোসেন ডি-বক্সে প্রবেশ করলে সিঙ্গাপুরের ডিফেন্ডার তার পায়ে স্পষ্ট ফাউল করেন। গ্যালারি, খেলোয়াড় ও ধারাভাষ্যকারদের মতে, এটি পরিষ্কার পেনাল্টি ছিল। কিন্তু রেফারি খেলা চালিয়ে যেতে বলেন এবং বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়।

এএফসি বাছাইপর্বের এই রাউন্ডে ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি (VAR) ব্যবহৃত হয় না, ফলে মাঠের রেফারির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হিসেবে গৃহীত হয়।

এ ধরনের বিতর্কিত সিদ্ধান্ত শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রেই নয়, এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের অন্যান্য ম্যাচেও দেখা গেছে, যেখানে স্পষ্ট হ্যান্ডবল বা ফাউলের পরও পেনাল্টি দেওয়া হয়নি। বাংলাদেশ ম্যাচের বড় অংশে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেললেও, রেফারির বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ও ফিনিশিংয়ে ঘাটতির কারণে কাঙ্ক্ষিত ফল পায়নি।

রেফারির ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ও গ্যালারিতে ব্যাপক আলোচনা চলছে। ফুটবল বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত ফুটবলের প্রতি দর্শকদের আস্থা ও খেলোয়াড়দের মনোবলকে প্রভাবিত করে।

ম্যাচ ঘিরে স্টেডিয়ামে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। দুপুর থেকেই হাজার হাজার দর্শক স্টেডিয়ামের দিকে ছুটে আসেন। গেইট খোলার আগেই লাইন, পতাকা, ব্যান্ড, ফ্লেয়ার—সব মিলিয়ে ছিল এক উৎসবের আমেজ।

বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ম্যাচে লড়াকু পারফরম্যান্স দেখিয়েও শেষ পর্যন্ত ২-১ ব্যবধানে হারতে হয়েছে বাংলাদেশকে। তবে নতুন খেলোয়াড়দের আত্মপ্রকাশ, দর্শকদের উন্মাদনা এবং দলের লড়াই—সব মিলিয়ে দেশের ফুটবলে নতুন সম্ভাবনার বার্তা দিয়েছে আজকের ম্যাচ। ফুটবলপ্রেমীরা আশা করছেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে প্রযুক্তির সহায়তা ও আরও নিরপেক্ষ রেফারিং নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলাদেশ একাদশ

গোলরক্ষক: মিতুল মারমা

ডিফেন্ডার: তপু বর্মণ (অধিনায়ক), তারিক কাজী, সাদ উদ্দিন, শাকিল আহাদ

মিডফিল্ড: হামজা চৌধুরী, শমিত সোম, মোহাম্মদ হৃদয়

ফরোয়ার্ড: ফাহামিদুল ইসলাম, কাজেম শাহ, রাকিব হোসেন।

সিঙ্গাপুর একাদশ

হাসান সানি (GK), নাজরুল নাজারি, ইরফান ফান্দি, লিওনেল টান, ক্রিস্টোফার ভান হুইজেন, হারিস হারুন (C), ইউ ইয়াং সঙ, শাহদান সুড, ফারিস রামলি, ইলহান ফান্দি ও ইখসান ফান্দি।