ঈদের সকালে পদ্মার ভয়াল ভাঙন: আতঙ্কে নদীপাড়ের মানুষ

রবিবার, ৮ জুন, ২০২৫ ৩:৫৪ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
যখন সারা দেশ ঈদের আনন্দে মশগুল, তখন শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায় নেমে এসেছে পদ্মা নদীর ভয়াল থাবা।
ঈদের দিন ভোররাতে আকস্মিক ভাঙনে পদ্মা গিলে নিয়েছে পদ্মা সেতু প্রকল্পের আওতায় নির্মিত রক্ষা বাঁধের প্রায় ২৫০ মিটার অংশ। এর ফলে হুমকির মুখে পড়েছে শতাধিক বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট ও বাজার এলাকা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ভাঙনের কারণে জাজিরার মাঝিরঘাট বাজারসহ আশপাশের এলাকায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কায় ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছেন বাসিন্দারা। অনেকেই ইতোমধ্যে গৃহহীন হয়ে পড়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ সেলিম বলেন, "ঈদের নামাজ পড়া তো দূরের কথা, ভোর থেকে ঘর সরাতেই ব্যস্ত। এখন পরিবার নিয়ে কোথায় যাব, তাও জানি না।"
ব্যবসায়ী আব্দুল কাদের মিয়া জানান, "ঈদ উপলক্ষে দোকানে নতুন মাল এনেছিলাম। এখন সব শেষ। দোকানটা নদীতে চলে গেলে জীবনটাই শেষ হয়ে যাবে।"
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২০১০-১১ অর্থবছরে মাঝিরঘাট থেকে পূর্ব নাওডোবা পর্যন্ত ২ কিলোমিটার দীর্ঘ রক্ষা বাঁধ নির্মাণে ব্যয় হয় ১১০ কোটি টাকা। তবে নির্মাণের এক বছরের মধ্যেই বাঁধে ভাঙন শুরু হয়। গত বছরের নভেম্বরেও নাওডোবা এলাকায় ১০০ মিটার বাঁধ ধসে যায়, যার মেরামতে ব্যয় হয় ২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এবার সেই পুনর্নির্মিত এলাকাসহ আরও একটি বড় অংশ একদিনেই নদীতে বিলীন হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সুমন চন্দ্র বনিক বলেন, "ভাঙনের খবর পাওয়ার পরপরই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। খুব দ্রুত জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হবে।"
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, বছরের পর বছর ভাঙন ঠেকাতে কোটি কোটি টাকা খরচ হলেও স্থায়ী কোনো সমাধান দেখা যায়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিকল্পনার অভাব ও দুর্নীতি-অনিয়মের কারণে বারবার এমন দুর্যোগের মুখে পড়ছে পদ্মাপাড়।
নদী তীরবর্তী বাসিন্দা বাদশা শেখ বলেন, "অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নদীর গতিপথ বদলে গেছে। এরই প্রভাব পড়ছে ভাঙনে। আমরা চাই, অবিলম্বে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করে একটি শক্তিশালী স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হোক।"
এই ভয়াবহ ভাঙনের ফলে এখন প্রশ্ন একটাই—"আমাদের ভবিষ্যৎ কী?"
ঈদের দিন যখন সারাদেশ খুশিতে মাতোয়ারা, তখন জাজিরার পদ্মাপাড়ে শুধু কান্না, আতঙ্ক আর সর্বস্ব হারানোর বেদনা। এই ঘটনা শুধু একটি বাঁধ ধস নয়, এটি একটি বড় ধরনের অব্যবস্থাপনা, প্রাকৃতিক প্রতিশোধ এবং মানবিক বিপর্যয়ের প্রতীক।
১০৯ বার পড়া হয়েছে