বাংলাদেশের তদন্তে ‘অসন্তুষ্ট’ মালয়েশিয়া, শ্রমিক দুর্নীতি তদন্ত বন্ধের অনুরোধ

বৃহস্পতিবার , ১৫ মে, ২০২৫ ১০:০৭ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক পাঠানোর প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ও মানবপাচারের অভিযোগে চলমান তদন্ত বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে মালয়েশিয়া।
দেশটির দাবি, এসব অভিযোগের অধিকাংশই ‘ভিত্তিহীন’ এবং এর ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মালয়েশিয়ার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
মার্কিন গণমাধ্যম ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৩ এপ্রিল মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব আজমান মোহাম্মদ ইউসুফ বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নেয়ামত উল্লাহ ভূঁইয়াকে একটি চিঠি পাঠান। ব্লুমবার্গের দাবি, চিঠির একটি কপি তারা দেখেছে এবং এর সত্যতাও একজন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন।
চিঠিতে আজমান লেখেন, “মানবপাচার ও অর্থপাচারের অভিযোগ, যার অধিকাংশই ভিত্তিহীন, তা মালয়েশিয়ার আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।” তিনি অনুরোধ করেন, যথাযথ প্রমাণ ছাড়া দায়ের করা অভিযোগগুলো যেন বাংলাদেশ সরকার প্রত্যাহার করে নেয়।
মালয়েশিয়ার অভিযোগ, এই ধরনের তদন্তের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক মানবপাচার পরিস্থিতি মূল্যায়ন প্রতিবেদনে (TIP রিপোর্ট) তাদের অবস্থান অবনতির দিকে যাচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও সহায়তা প্রাপ্তিতে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
আজমান তার চিঠিতে দুই দেশের মধ্যে একটি আনুষ্ঠানিক চুক্তি বা প্রক্রিয়া চালুর প্রস্তাবও দেন, যাতে ভবিষ্যতে বাতিল হওয়া মামলা আবার শুরু না হয়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। সচিব নেয়ামত উল্লাহ ভূঁইয়া ও মন্ত্রী আসিফ নজরুলও ব্লুমবার্গকে মন্তব্য দিতে রাজি হননি। মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকেও এখনো কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি।
চিঠিটি এমন সময়ে এসেছে, যখন দুই দেশের শীর্ষ কর্মকর্তারা শ্রমিক নিয়োগ পুনরায় চালু করার বিষয়ে আলোচনায় বসতে যাচ্ছেন। বৃহস্পতিবার পুত্রজায়ায় মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও মানবসম্পদমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসবেন বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালে মালয়েশিয়া বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়া স্থগিত করে। অভিযোগ ছিল—বহু শ্রমিক প্রতিশ্রুত চাকরি পাননি, অথচ তারা আগেই লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করেছিলেন। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলেও এই ইস্যুতে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল।
এরপর বাংলাদেশে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং পুলিশ যৌথভাবে তদন্ত শুরু করে। মালয়েশিয়ার দুই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মানবপাচার, অর্থপাচার ও চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা হয় এবং তাদের প্রত্যার্পণের দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি, বাংলাদেশের কয়েকজন রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক ও একাধিক সাবেক সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধেও তদন্ত চলছে।
বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রায় ৯ লাখ ৫০ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক রয়েছেন। গত দুই দশকে এই সংখ্যা এক মিলিয়ন ছাড়িয়েছে। তবে ঋণের বোঝা ও চাকরির অনিশ্চয়তায় অনেকেই শোষণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
১১৮ বার পড়া হয়েছে