সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ভ্রাম্যমাণ দোকান উচ্ছেদ, নিরাপত্তা জোরদারে ৭ দফা সিদ্ধান্ত

বৃহস্পতিবার , ১৫ মে, ২০২৫ ৭:৪৯ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গড়ে ওঠা অবৈধ ভ্রাম্যমাণ দোকান ও স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান শুরু করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।
আজ বৃহস্পতিবার (১৫ মে) সকাল ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন গেট এলাকা থেকে অভিযান শুরু হয়।
ডিএসসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে পরিচালিত এই অভিযানে অংশ নেয় গণপূর্ত অধিদপ্তর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ থানা পুলিশ এবং আনসার সদস্যরা।
অভিযান চলাকালে দেখা গেছে, উদ্যানে থাকা শতাধিক অবৈধ দোকান ও অস্থায়ী স্থাপনা চারটি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। অভিযানে সহযোগিতা করে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য।
এই উচ্ছেদ অভিযানে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে। ক্ষতিগ্রস্ত এক দোকানি রনি মিয়া বলেন, “অপরাধ করেছে বাইরের লোকজন, কিন্তু ভুগছি আমরা। এই দোকান দিয়েই সংসার চলে।”
ডিএসসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আমিনুল ইসলাম বলেন, “সোহরাওয়ার্দী উদ্যান একটি জাতীয় সম্পদ। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে অসংখ্য মানুষ এখানে ঘুরতে আসেন। নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতে আমরা অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করছি।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট ম্যানেজার (ভারপ্রাপ্ত) ফাতেমা বিনতে মুস্তাফা বলেন, “আমরা উদ্যানে শৃঙ্খলা ও সৌন্দর্য রক্ষায় সবার সহযোগিতা কামনা করছি। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এটি একটি সম্মিলিত উদ্যোগ।”
শিক্ষার্থী খুনের ঘটনায় নড়ে চড়ে বসেছে প্রশাসন
গত মঙ্গলবার (১৩ মে) দিবাগত রাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য। তিনি শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী এবং স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন।
এই হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি তোলে।
পরিস্থিতি বিবেচনায় গতকাল (১৪ মে) রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর যৌথ বৈঠকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘিরে সাতটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
নিরাপত্তা নিশ্চিতে সাত দফা সিদ্ধান্ত:
১. টিএসসি সংলগ্ন ফটক স্থায়ীভাবে বন্ধ থাকবে।
২. উদ্যানে অবৈধ দোকান উচ্ছেদ, মাদক নির্মূল ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে যৌথ অভিযান চালানো হবে।
৩. নিয়মিত অভিযান ও তদারকির জন্য কমিটি গঠন করা হবে।
৪. সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন ও পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
৫. উদ্যানে একটি ডেডিকেটেড পুলিশ বক্স স্থাপন করা হবে।
৬. রমনা পার্কের আদলে উদ্যানে শৃঙ্খলাব্যবস্থা চালু করা হবে।
৭. রাত ৮টার পর উদ্যান জনসাধারণের জন্য বন্ধ থাকবে।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া সামাজিক মাধ্যমে এসব সিদ্ধান্তের কথা জানান।
উল্লেখ্য, এসব পদক্ষেপের মূল লক্ষ্য—উদ্যানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং এটি একটি সুপরিকল্পিত, নিরাপদ ও পরিচ্ছন্ন স্থানে রূপান্তর করা।
১১৫ বার পড়া হয়েছে