জনস্বাস্থ্যে স্বৈরাচারীদের দোসরদের পদোন্নতির অরাজকতা: গ্রেডেশন তালিকা না করেই চলছে দুর্নীতির খেলা

বৃহস্পতিবার , ৮ মে, ২০২৫ ১২:১৬ অপরাহ্ন
শেয়ার করুন:
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে চলমান দুর্নীতির অন্ধকারে নতুন করে তেজস্ক্রিয় আলো ফেলেছে সরকারি উচ্চ পর্যায়ে স্বৈরাচারী দোসরদের পদোন্নতি! বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচারী শাসনের পতন হলেও, দোসর মুক্ত হয়নি এই গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দপ্তরটির।
বিশেষ করে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগে চলছে অপ্রত্যাশিত ও অনিয়মিত পদোন্নতির মহোৎসব, যা সাধারণত নিয়ম অনুযায়ী স্বচ্ছ ও জোষ্ঠতা ভিত্তিক হওয়া উচিত।
গ্রেডেশন তালিকা না করেই চলছে পদোন্নতি:
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে একটি পূর্ণাঙ্গ গ্রেডেশন তালিকা বা জোষ্ঠতা তালিকা তৈরির কথা থাকলেও, তা আজও তৈরি হয়নি। এর ফলে, শূন্য পদে যেকোনো কর্মকর্তা বা প্রকৌশলীকে যোগ্যতা বিবেচনা না করে, কেবল ক্ষমতা বা স্বজনপ্রীতির ভিত্তিতে পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (গ্রেড-৪) এর শূন্য পদে ১৫ জন কর্মকর্তাকে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে, যেখানে এই প্রক্রিয়ার জন্য কোনও নির্ধারিত গ্রেডেশন তালিকা বা নিয়মের তোয়াক্কা করা হয়নি। কর্মকর্তাদের মধ্যে বেশিরভাগই বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের সদস্য বা নেতা, যারা স্বৈরাচারী সরকারের পৃষ্ঠপোষক বলে জানা গেছে।
অবশ্যই নিয়মের উল্টোপথে পদোন্নতি:
অঙ্গীকার থাকলেও, এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ অবহেলার মাধ্যমে চলছে। এর আগে, নিয়মনীতি উপেক্ষা করে এমন প্রস্তাব পাঠানোর কারণে, এই পদোন্নতিগুলো প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল। তবে, বর্তমান সরকার আবারো একই পদ্ধতিতে পদোন্নতি চালিয়ে যাচ্ছে, যেখানে নিয়মের তোয়াক্কা করা হয়নি। এর ফলে, যোগ্য ও সৎ কর্মকর্তারা বঞ্চিত হচ্ছেন, আর স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির সুযোগ পাচ্ছেন ক্ষমতাধর স্বৈরাচারী দোসররা।
প্রভাব ও বিপদ:
সরকারের উচ্চ পর্যায়ে অবসরোত্তর ছুটিতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি চলাকালীন, শূন্য পদগুলো দ্রুত পূরণে এই অপ্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া চালানো হয়। এতে করে, প্রশাসনিক জটিলতা ও অস্থিরতা সৃষ্টি হচ্ছে। পাশাপাশি, অযোগ্য ও স্বজনপ্রীতিতে প্রোমোশন পেয়ে কর্মকর্তাদের অনৈতিক সুবিধা নেওয়া ও ক্ষমতার অপব্যবহার বেড়ে যাচ্ছে। এতে করে, দেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-৬ অর্জনে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে, যা সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে অপ্রতিরোধ্য আঘাত।
সরকারের অস্বীকৃতি ও ক্ষোভ:
অবশ্যই, পানি সরবরাহ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোঃ ফজলুর রহমান এ বিষয়ে জানান, এ বিষয়ে তার কোনও জানা নেই। তবে, অভ্যন্তরীণ সূত্র ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অভিযোগ বলে, এই পদোন্নতি প্রক্রিয়ায় স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে, যেখানে স্বৈরাচারী দোসরদের পদোন্নতি দিয়ে সমর্থন জোগানো হয়েছে। কিছু কর্মকর্তারা এই দুর্নীতির বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই ধরনের অপ্রত্যাশিত ও অনিয়মিত পদোন্নতি, যেখানে নিয়মের তোয়াক্কা না করে স্বজনপ্রীতি চালানো হচ্ছে, তা দেশের সরকারি ব্যবস্থার জন্য বিপদজনক।
নিয়মের অভাব ও দুর্নীতির সুযোগ:
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে স্বচ্ছতার অভাবের কারণে, নিয়ম অনুযায়ী জোষ্ঠতা তালিকা বা গ্রেডেশন তালিকা তৈরি হয়নি। ফলে, অস্বচ্ছ ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে অনেক সিনিয়র কর্মকর্তা প্রমোশন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, অন্যদিকে, অনৈতিক পন্থায় তদবির ও অর্থের বিনিময়ে অনেক জুনিয়র কর্মকর্তা পদোন্নতি পাচ্ছেন। এই পরিস্থিতি, সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগে চলমান এই অপ্রত্যাশিত পদোন্নতি প্রক্রিয়া, নিয়মের ব্যত্যয় ও দুর্নীতির আলামত। সরকারের উচিত, দ্রুত একটি স্বচ্ছ, নিয়ম অনুযায়ী ও জোষ্ঠতা ভিত্তিক গ্রেডেশন তালিকা তৈরি করে, সকল কর্মকর্তার ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করা। অন্যথায়, দেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থা আরও দুর্বল হয়ে পড়বে, আর দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অন্ধকারে ডুবে থাকবে দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি। জনগণের প্রত্যাশা, সরকার এই অপকর্মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে ও দুর্নীতির মূল উৎসগুলো চিহ্নিত করে দমন করবে।
১১৮ বার পড়া হয়েছে