মহাসড়কে বেড়েই চলেছে ডাকাতি, আসন্ন ঈদে আতঙ্কে পশু ব্যবসায়ীরা

সোমবার, ৫ মে, ২০২৫ ৩:৫৯ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
ঈদুল আজহা সামনে রেখে দেশের মহাসড়কগুলোয় নিরাপত্তা জোরদার করা হলেও কমছে না ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা। দিন বা রাত—কোনো সময়েই যাত্রা এখন নিরাপদ নয়।
যাত্রী, চালক থেকে শুরু করে কোরবানির পশু ব্যবসায়ীরাও আতঙ্কে রয়েছেন পথে পথে ডাকাতের কবলে পড়ার ভয়ে।
হাইওয়ে পুলিশের তথ্য বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত আটটি প্রধান মহাসড়কে অন্তত ১৭টি ডাকাতি মামলার খবর পাওয়া গেছে, গ্রেপ্তার হয়েছে ৪১ জন। তবে মাঠপর্যায়ের খবর বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রকৃত ঘটনা ও মামলা-গ্রেপ্তারের মধ্যে বিস্তর ফারাক।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেই সবচেয়ে বেশি অপরাধ
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দি থেকে চৌদ্দগ্রাম এবং নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ পর্যন্ত প্রায়ই ঘটছে ডাকাতি ও ছিনতাই। সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর থেকে মেঘনা টোলপ্লাজা পর্যন্ত এলাকাটি ‘হটস্পট’ হিসেবে চিহ্নিত। এ মহাসড়কজুড়ে বসানো হয়েছে এক হাজার ৪২৭টি সিসি ক্যামেরা, তবু অপরাধ থামছে না।
সম্প্রতি র্যাব বা ডিবি পুলিশ পরিচয়ে যাত্রী নামিয়ে সর্বস্ব লুটের মতো ঘটনাও ঘটেছে, যার মধ্যে প্রবাসী ও ব্যবসায়ীও রয়েছেন। চালক-সহকারীদেরও এ ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে, যা পরিস্থিতিকে আরও উদ্বেগজনক করে তুলছে।
ঢাকা-রাজশাহী ও ঢাকা-আরিচা মহাসড়কেও আতঙ্ক
ঢাকা-রাজশাহী, রাজশাহী-নওগাঁ ও রাজশাহী-বগুড়া মহাসড়কে রাতের বেলায় একের পর এক ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। যানজটে আটকে থাকা বাস, এমনকি দিনে-দুপুরেও ডাকাতির শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানির অভিযোগও সামনে এসেছে।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভার অংশ, বিশেষ করে ব্যাংক টাউন ও পুলিশ টাউন এলাকায় দিনে-দুপুরেও ডাকাতি হচ্ছে। মার্চ মাসেই সেখানে তিনটি ডাকাতির ঘটনা ঘটে, এপ্রিলের প্রথম ১১ দিনেই দুবার ডাকাতি ও ছিনতাই হয়েছে।
ঈদে পশুবাহী ট্রাক ডাকাতির আশঙ্কা, বাড়ছে নিরাপত্তা
কোরবানির পশু পরিবহন নিয়ে সবচেয়ে বেশি চিন্তিত গরু ব্যবসায়ীরা। কুষ্টিয়ার গরু ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন বলেন, “আগে মাঝ রাস্তায় জোর করে গরু নামিয়ে নেওয়া, এমনকি ট্রাক ডাকাতির শিকার হয়েছি। এবার নিরাপদ যাত্রা চাই।” পুলিশ জানিয়েছে, ঈদ উপলক্ষে বরিশাল থেকে ৩৯ জন ফোর্স এনে সাভারসহ গুরুত্বপূর্ণ রুটে মোতায়েন করা হয়েছে। বাসে তল্লাশি, নতুন চেকপোস্ট স্থাপন ও যাত্রীবেশে পুলিশি নজরদারি চালানো হচ্ছে।
জনবল সংকট বড় চ্যালেঞ্জ
হাইওয়ে পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. দেলোয়ার হোসেন মিঞা বলেন, “বর্তমানে আমাদের জনবল মাত্র ২,৮৭৪ জন, প্রয়োজন ১০ হাজার। আমরা অন্তত ৬ হাজার নতুন জনবল চেয়েছি। তবেই ডাকাতি অনেকাংশে কমানো সম্ভব।”
ডিআইজি (অপারেশন) মো. শফিকুল ইসলাম জানান, “৭০০ অতিরিক্ত ফোর্স ও গাড়ি ভাড়া করে টহল বাড়ানো হয়েছে। ঈদের আগে আরও ২০০-৩০০ ফোর্স যুক্ত হবে।”
ডাকাতদের জামিনে বেড়েছে অপরাধ
পুলিশ বলছে, ৫ আগস্টের পর জামিন পাওয়া অনেক ডাকাত ফের সক্রিয় হয়েছে। তাদের তালিকা করে জেলা পুলিশকে জানানো হয়েছে, এবং অভিযান চলমান।
পথযাত্রীদের জন্য পুলিশের পরামর্শ
বিদেশগামী যাত্রীদের ব্যক্তিগত গাড়ির চালকের সঙ্গে লোকেশন শেয়ার করতে বলা হচ্ছে। পশুবাহী ট্রাকে আগেভাগেই হাটের নাম লেখা ব্যানার ঝুলিয়ে দিতে বলা হয়েছে, যাতে রাস্তায় গরু নামানোর ঝামেলা না হয়।
টেকসই সমাধানের জন্য শুধু জনবল ও টহল নয়, প্রয়োজন প্রযুক্তি-নির্ভর নজরদারি, স্থানভিত্তিক হটস্পট বিশ্লেষণ এবং কঠোর আইনি ব্যবস্থা। আসন্ন ঈদে সাধারণ যাত্রী ও পশু ব্যবসায়ীদের নিরাপদ রাখতে পুলিশের কার্যকর ব্যবস্থা দ্রুত দেখতে চাইছে দেশবাসী।
১১৪ বার পড়া হয়েছে