সর্বশেষ

জাতীয়

ডেসকোর প্রস্তাবিত অর্গানোগ্রাম ২০২৫: বিতর্ক-বৈষম্যের অভিযোগ ও আর্থিক ক্ষতির শঙ্কা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা

রবিবার, ৪ মে, ২০২৫ ৫:০৩ অপরাহ্ন

শেয়ার করুন:
রাজধানী ঢাকার বৃহৎ এলাকাজুড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহে নিয়োজিত কোম্পানি ডেসকো'র প্রস্তাবিত অর্গানোগ্রাম ২০২৫ নিয়ে তীব্র অসন্তোষ ও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।

বিদ্যমান অর্গানোগ্রামের তুলনায় নতুন কাঠামোতে জনবল বৃদ্ধির পাশাপাশি পদোন্নতি ও পদসৃষ্টিতে চরম বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে উচ্চতর গ্রেডের কর্মকর্তাদের জন্য বিপুল সংখ্যক পদ সৃষ্টি এবং নিম্ন ও মধ্যম গ্রেডের কর্মচারীদের জন্য নামমাত্র পদ বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে গুরুরত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠেছে। এর ফলে কোম্পানির আর্থিক ক্ষতির শঙ্কাও প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

ডেসকো'র বিদ্যমান অর্গানোগ্রাম-২০১৮ অনুযায়ী জনবল সংখ্যা ২২১১ জন। প্রস্তাবিত অর্গানোগ্রাম-২০২৫ এ জনবল সংখ্যা বৃদ্ধি করে ২৫০৩ জন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থাৎ, মোট ২৯২টি নতুন পদ সৃষ্টি করা হবে। তবে এই পদসৃষ্টিতেও চরম বৈষম্যের বিবর্ণ চিত্র ফুটে উঠেছে।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জানা গেছে, নতুন সৃষ্ট ২৯২টি পদের মধ্যে পে-গ্রেড ৩ থেকে ৭ পর্যন্ত ৫টি গ্রেডের বিপরীতে বৃদ্ধি করা হয়েছে বিপুল সংখ্যক ১৯৮টি পদ। অন্যদিকে, পে গ্রেড ৮ থেকে ১৬ পর্যন্ত ৯টি গ্রেডের বিপরীতে সৃষ্টি করা হয়েছে মাত্র ৯৪টি পদ।

এক্ষেত্রে লক্ষণীয় বিষয় হলো, বিদ্যমান অর্গানোগ্রামের চেয়ে পে গ্রেড ৩ থেকে ৭ পর্যন্ত কর্মকর্তার সংখ্যা অনেক বেশি থাকলেও তাদের জন্যই আরও বিপুল সংখ্যক বা বাড়তি পদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, বর্তমানেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা পদ না থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন দপ্তরে সংযুক্ত (অ্যাটাচড) অবস্থায় রয়েছেন এবং তারা কাজ ছাড়াই বেতন-ভাতা ভোগ করছেন।

এই বিপুল সংখ্যক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার জন্যই নতুন পদ সৃষ্টি এবং তাদের বেতন, বাড়ি ভাড়া, মেডিকেল, গাড়ি ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক সুযোগ সুবিধা বাবদ ডেসকো'র প্রতিমাসে অতিরিক্ত প্রায় ৭ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা খরচ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।অথচ ডেসকো বর্তমানে প্রতিবছর প্রায় ২৭০.৮২ কোটি টাকা লোকসানে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতেও এই বিপুল পরিমাণ অতিরিক্ত ব্যয় কোম্পানির আর্থিক অবস্থাকে আরও নাজুক করে তুলবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

অন্যদিকে, পে-গ্রেড ৮ থেকে ১৬ তে কর্মরত বিপুল সংখ্যক কর্মকতা-কর্মচারী বা এমপ্লয়ীর জন্য প্রস্তাবিত অর্গানোগ্রামে তেমন কোনই পদবী বা পদোন্নতির ব্যবস্থাও রাখা হয়নি। নামমাত্র ৯৪টি পদের মধ্যে এই বিশাল সংখ্যক কর্মচারীর পদোন্নতির সুযোগও অত্যন্ত সীমিত। এর ফলে এই গ্রেডের কর্মচারীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ, অসন্তোষ এবং হতাশা বিরাজ করছে।

কর্মকতা-কর্মচারীদের অভিযোগ, গত ৫ই আগস্ট পট পরিবর্তনের পর বৈষম্য দূর করার আশা করা হয়েছিল। এবং একটি গিভেন্স কমিটিও গঠন করা হয়েছিল। সেই কমিটির রিপোর্ট এখনও আলোর মুখ তো দেখেইনি উপরন্তু আওয়ামী লীগের রেখে যাওয়া কিছু স্বৈরাচারী কর্মকর্তার যোগসাজশে নতুন অর্গানোগ্রামের মাধ্যমে আরও বেশি বৈষম্য তৈরি করার অপচেষ্টা চলছে।

যার মধ্যে নবগঠিত জিয়া পরিষদ ডেসকো শাখার তথাকথিত যুগ্ম আহবায়ক ও শেখ মুজিবকে মনেপ্রাণে ধারণকারী কবিতালেখক (কীর্তিমান) ম্যানেজার মো: আবু ইউসুফ এবং তার দুই নিকটাত্মীয় তত্ত্বাবধারক প্রকৌশলী, এসি মোস্তাফিজুর রহমান আকন্দ, নির্বাহী প্রকৌশলী গিয়াসউদ্দিন ও ম্যানেজার আব্দুল মান্নাফসহ আরও কয়েকজন এই চক্রে জড়িত রয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এই চক্রটি আগামী পরশুদিন ৬ মে অনুষ্ঠিতব্য ডেসকো'র বোর্ড সভায় এই বিতর্কিত বিষয়টি এজেন্ডায় অন্তভূক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন! আর বিতর্কিত এসব এজেন্ডার সঙ্গে ডেসকো'র নবনিযুক্ত এক প্রশাসনিক নির্বাহী পরিচালকের দাপ্তরিক ক্ষমতার অপব্যবহারেরও গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগ রয়েছে, ডেসকো'র কিছু কর্মকর্তা যারা পূর্ববর্তী সরকারের আমলে সুবিধাভোগী ছিলেন, তারা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির লক্ষে তড়িঘড়ি করে এই বিতর্কিত অর্গানোগ্রাম পাশ করিয়ে ডেসকোকে আর্থিকভাবে দুর্বল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন। তাদের প্রভাবেই উচ্চ গ্রেডের কর্মকর্তাদের জন্য বিপুল সংখ্যক পদ সৃষ্টি করে নিজেদের ও তাদের অনুসারীদের সুবিধা নিশ্চিত করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে।

ডেসকোর প্রস্তাবিত অর্গানোগ্রাম ২০২৫ নিয়ে উত্থাপিত বৈষম্যের অভিযোগ এবং আর্থিক ক্ষতির শঙ্কা অত্যন্ত গুরুতর। এমন একটি জনগুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে পদ সৃষ্টিতে এমন বৈষম্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মনোবল নষ্ট করবে, সরকারের কর্মকাণ্ডকে বিতর্কিত এবং সামগ্রিকভাবে কোম্পানির কার্যকারিতাও ব্যাহত করবে। এতে বিদ্যুৎখাতের শীর্ষস্থানীয় এই কোম্পানির খরচও বাড়বে আরও সাড়ে ৭ কোটি টাকার। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত, দ্রুত এই অর্গানোগ্রামটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আরও পর্যালোচনা করা এবং সকল পক্ষের জন্য ন্যায্য ও যৌক্তিক একটি কাঠামো তৈরি করা। অন্যথায়, ডেসকো'র আর্থিক সংকট আরও বাড়বে এবং প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে অসন্তোষ চরমে পৌঁছাবে।

১৩৫ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
জাতীয় নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন