আফতাবনগরে ফের পশুহাট বসানোর পরিকল্পনা ঘিরে উত্তেজনা, প্রতিবাদে মানববন্ধন ও সমাবেশ

শুক্রবার, ২ মে, ২০২৫ ২:১৪ অপরাহ্ন
শেয়ার করুন:
রাজধানীর আফতাবনগরে আবারো পশুহাট বসানোর চেষ্টায় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ ও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার (২ মে) জুমার নামাজের পর আফতাবনগর জিরো পয়েন্টে একত্রিত হয়ে স্থানীয়রা মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন।
বিভিন্ন মহল্লার বাড়ি ও ফ্ল্যাট মালিক, মুসল্লি ও বাসিন্দাদের অংশগ্রহণে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে তারা হাইকোর্টের রায় উপেক্ষা করে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অস্থায়ী পশুহাটের ইজারা কার্যক্রমের নিন্দা জানায়।
স্থানীয়রা বলেন, এই এলাকাটি একটি পরিকল্পিত উচ্চবিত্ত আবাসিক এলাকা, যেখানে প্রায় অর্ধেক প্লটেই এখনো নির্মাণ কাজ চলমান। এখানে বসবাস করেন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, বিচারপতি, আইনজীবী, ডাক্তার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী। একারণে এই এলাকার পরিবেশ, শান্তি ও পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় তারা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
প্রতিবেশী এলাকাগুলোতে ইতিমধ্যে গরুর হাটের জন্য ইজারা কার্যক্রম শুরু হলেও, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে এলাকার মানুষ দীর্ঘদিন থেকে আপত্তি জানিয়ে আসছে। গত বছর হাইকোর্টের নির্দেশনায় পশুহাটের অনুমোদন না থাকলেও, সম্প্রতি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন কৌশলে বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী হাটের জন্য ইজারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এতে সরাসরি আফতাবনগরের নাম না থাকলেও, স্থান হিসেবে উল্লেখ করা হয় বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিং এর ব্লক এম-৪, এম-৫, এন-০৪ (আংশিক) ও সানভ্যালি (আংশিক), যা স্থানীয়দের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ইতিমধ্যে আফতাবনগরে পশুহাট বসানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে। তবে, উত্তর সিটি কর্পোরেশন এখনো কৌশলগতভাবে অস্থায়ী হাটের ইজারা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, যা এলাকাবাসীর জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এলাকার একাধিক বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী জানান, পশুহাটের কারণে যানজট, দুর্গন্ধ, ময়লা-আবর্জনা এবং পরিবেশ দূষণ ব্যাপক আকার ধারণ করছে। বিশেষ করে ঈদের সময় গরুর হাটের জন্য প্রবেশ ও বের হওয়ার একমাত্র পথটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়, ফলে সাধারণ মানুষের চলাচল ও জরুরী সেবা ব্যাহত হয়।
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন এলাকার বাসিন্দা, ফ্ল্যাট মালিক, মুসল্লি ও বিভিন্ন মহল্লার গুরুতর ব্যক্তিরা। তারা হাইকোর্টের নির্দেশনা অমান্য করে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের গৃহীত অস্থায়ী পশুহাটের ইজারা প্রক্রিয়াকে নাগরিক স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর বলে অভিহিত করেন। বক্তারা দাবি করেন, পশুহাটের কারণে পরিবেশ অশুচি ও অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠছে, সাথে যানজট ও দুর্গন্ধের সমস্যা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এই এলাকায় পূর্বে ঢাকাস্থ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন যেখানে পশুহাট বসানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছিল, সেখানে এখন আবার উত্তর সিটি কর্পোরেশন অস্থায়ী হাটের ইজারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্টভাবে আফতাবনগর বা এর নাম উল্লেখ না করলেও, নির্দিষ্ট এলাকাগুলোর স্থানীয় পরিচিতি অনুযায়ী বোঝা যাচ্ছে, এটি একই এলাকায়। এতে করে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের জন্ম হয়েছে, কারণ তারা মনে করেন, এই সিদ্ধান্ত তাদের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি।
অপরদিকে, এলাকায় যানজট, দুর্গন্ধ ও পরিবেশ দূষণ আরও বেড়ে চলেছে। পশুর বর্জ্য ও ময়লা-আবর্জনায় সড়ক ও আশপাশের পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠছে। একমাত্র প্রবেশ ও বের হবার পথের উপর নির্ভরশীল এলাকায় পশুহাটের সময় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, ফলে সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়। দীর্ঘ দিন ধরে এই পরিস্থিতি চলতে থাকায় বাসিন্দারা আরও অসন্তুষ্ট।
বিশিষ্ট সমাজসেবক ও ব্যবসায়ী কাজী আলমগীর বলেন, আফতাবনগর একটি উচ্চমানের, পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা, যেখানে বেশ কয়েক হাজার পরিবার বাস করে। এখানে অনেক সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও মাদরাসা রয়েছে, যারা এই পরিবেশের স্বাভাবিকতা চায়। তিনি জানান, প্রবেশ ও বহিরাগত গরুর ট্রাকের জন্য একমাত্র পথটি বন্ধ হয়ে গেলে, এলাকার জনজীবন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। তিনি বলেন, গত বছর হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার কারণে পশুহাট হয়নি, কিন্তু এই বছর আবারো পরিকল্পনা শুরু হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এ ধরনের হাটের জন্য এই এলাকায় বড় ধরনের অশান্তি ও অসুবিধা হয়।
প্রতিবেশী এলাকাগুলোর মতোই এই এলাকাও দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশ ও জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এলাকাবাসীর দাবী, শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে দ্রুত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতিকার দরকার। তারা অনুরোধ করেন, এই পরিবেশ বিপর্যয় থেকে এলাকাবাসীকে রক্ষা করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
অতীতে, হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী, গত ঈদুল আজহায় আফতাবনগরে পশুহাট বসানোর অনুমোদন দেওয়া হয়নি। বিচারপতিদের বেঞ্চ ২০২৪ সালের ৩০ এপ্রিল এ বিষয়ে রুল জারি করে। এর আগে, এলাকাবাসী রিট দায়ের করে এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন। তারা বলেন, পশুহাটের কারণে শিক্ষার্থীদের চলাচল, বিদ্যুৎ ও বাতির ক্ষতি হচ্ছে।
সব মিলিয়ে, এলাকাবাসীর একটাই দাবি—শান্তি ও পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হোক। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে, পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি ও জনজীবনে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হবে।
১৩১ বার পড়া হয়েছে