অবাস্তব লক্ষ্যমাত্রায় চাপে এনবিআর, চার মাসেই ঘাটতি ১৭ হাজার কোটি
মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৫ ২:৪৭ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
অর্থবছরের শুরু থেকেই রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের ঘাটতির মুখে পড়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সক্ষমতার তুলনায় ধারাবাহিকভাবে উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য নির্ধারণের কারণে চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসেই রাজস্ব ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ২১৯ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরে প্রাথমিকভাবে চার লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করা হলেও অর্থ বিভাগের সাম্প্রতিক সংশোধনে তা বাড়িয়ে পাঁচ লাখ ৫৪ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা, মানুষের আয় হ্রাস ও নির্বাচন-পূর্ব পরিস্থিতির কারণে এই সংশোধিত লক্ষ্য বাস্তবায়ন আরও কঠিন হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
গত কয়েক বছর ধরেই এনবিআর নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য রাজস্ব লক্ষ্য ছিল চার লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা, যা পরে কমিয়ে আনা হয় চার লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকায়। তবুও বছর শেষে আদায় হয় মাত্র তিন লাখ ৭১ হাজার কোটি টাকা-ফলে ঘাটতি দাঁড়ায় ৯২ হাজার কোটি টাকারও বেশি।
চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, এ সময় আদায় হয়েছে এক লাখ ১৯ হাজার ৪৭৮ কোটি টাকা। ফলে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার কোটি টাকার বেশি। নতুন সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, বাকি আট মাসে আদায় করতে হবে আরও চার লাখ ৩৪ হাজার ৫২২ কোটি টাকা।
সংশোধিত বাজেটে রাজস্বের বিভিন্ন খাতেও লক্ষ্য বাড়ানো হয়েছে-
আমদানি–রপ্তানি শুল্ক: ১ লাখ ২৯ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ ৪৪ হাজার ০৪০ কোটি টাকা।
ভ্যাট: ১ লাখ ৮৪ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ ০৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা।
আয়কর: সমপরিমাণে বৃদ্ধি—২০ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা।
এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান জানান, সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত অর্থ বিভাগের। সরকারের বাজেট ঘাটতি কমানোর লক্ষ্য থেকেই এ উদ্যোগ এসেছে। তবে তাঁর মতে, নতুন লক্ষ্য অর্জন 'অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং' হবে।
এনবিআরের সাবেক সদস্য ফরিদ উদ্দিন মনে করেন, এই লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত নয়। তাঁর ভাষায়, '২০১৬ সাল থেকেই রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছে না; গোঁজামিল দিয়েই চলছে। কাঠামোগত সংস্কার ও পূর্ণাঙ্গ অটোমেশন ছাড়া রাজস্ব আদায় বাড়ানো সম্ভব নয়।'
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেনও লক্ষ্য বৃদ্ধির যুক্তি খুঁজে পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, 'আগের লক্ষ্যই ছিল উচ্চাভিলাষী। ঘাটতি থাকা অবস্থায় তা আরও বাড়ানো-প্রাতিষ্ঠানিক বাস্তবতা হিসাবেও এর কোনো যৌক্তিকতা নেই।'
১১৬ বার পড়া হয়েছে