সর্বশেষ

সারাদেশ

সাজাপ্রাপ্ত ওয়াহিদা বেগমকে নীতিমালা লঙ্ঘন করে এমডি পদোন্নতির অভিযোগ

রাজশাহী প্রতিনিধি
রাজশাহী প্রতিনিধি

শনিবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৫ ৯:২২ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
রাজশাহী প্রাণকেন্দ্রিত ব্যাংকিং অঙ্গনে এক নতুন রাজনৈতিক-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সেখানকার কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে ওয়াহিদা বেগম‌কে নিয়োগ ও পদোন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা লঙ্ঘনের বিষয়টি সর্বোচ্চ আদালতে পৌঁছেছে।

গত ১৮ নভেম্বর, ২০২৫ তারিখে মহামান্য হাইকোর্ট একটি রুল নিসি (নামমাত্র আদেশ) জারি করেছে এবং কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছে। আদালত বলেছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ তাদের নিয়োগ পত্র (নিয়োগ পত্র নং ৫৩.০০.০০০০.৩১২.১২.০০৪.২০-৯২, তারিখ: ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫) জারি করে ওয়াহিদা বেগমকে রাকাব-এর এমডি পদে নিয়োগ দিয়েছে। কিন্তু এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের “ব্যাংক-কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিয়োগ নীতিমালা” (বিআরপিডি সার্কুলার নং-০৫, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪) অনুযায়ী করা হয়নি।

প্রধান অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে- নীতিমালার অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, এমডি পদে নিয়োগযোগ্যতার জন্য 'চারিত্রিক ও নৈতিক বিশুদ্ধতা' বাধ্যতামূলক। কিন্তু তার বিরুদ্ধে আদালতে ফৌজদারি ও দেওয়ানী রায়ের ইতিহাস আছে। আদালতে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা দেয়ার পরও তিনি তথ্য গোপন করে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছেন বলে অভিযোগ আছে।

নীতিমালার পরিশিষ্ট-ক অনুযায়ী নিয়োগের সময় প্রার্থীদের একটি ঘোষণাপত্র দিতে হবে, যেখানে তারা নিশ্চিত করবেন যে তাদের বিরুদ্ধে কোনো দৃষ্টিগোচর বা বিরুপ আদালতের পর্যবেক্ষণ নেই। অভিযোগ অনুযায়ী, ওয়াহিদা বেগম তার আবেদনে মিথ্যা তথ্য দাখিল করেছেন এবং পুরোনো আদালতের রায় গোপন করেছেন।

তিনি তার পুরাতন কর্মস্থল (অগ্রণী ব্যাংক) এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে প্রমোশন-বদল বাণিজ্যে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে ঘুষের বিনিময়ে পদোন্নতি এবং রাজনৈতিক প্রভাব প্রয়োগের অভিযোগ উঠেছে। একটি সূত্র বলেছে, কয়েকজন কর্মকর্তার কাছ থেকে 'বড় অঙ্কের ঘুষ' নেওয়া হয়েছিল। এছাড়া, সিন্ডিকেট ঋণ অনুমোদন, দলীয় নিয়োগ এবং মুখ্য প্রশাসন পরিচালনায় তার প্রভাবচালনার অভিযোগ রয়েছে।

রাকাব-কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁর অধীনে ব্যাংকে দলীয়করণ, ভয়ভীতি ও ব্যবস্থাপনায় পক্ষপাতিত্ব ফিরে এসেছে। এমন এক কর্মপরিবেশ গড়ে উঠেছে যেখানে মতবিরোধীদের বিরুদ্ধে পদবদল ও নিয়োগে প্রভাবশালীরা প্রাধান্য পাচ্ছেন।

হাইকোর্ট রুল নিসি জারি করে আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছে। অর্থাৎ, সংশ্লিষ্ট পক্ষ (ওয়াহিদা বেগম ও অন্যান্য) তাদের অবস্থান আদালতে উপস্থাপন করতে পারবে। ব্যাংক কর্মকর্তারা এবং ব্যাংক-সংলগ্ন কিছু কৃষক সংগঠন বলেছে, এটি শুধু একটি ব্যাংকীয় ইস্যু নয়; এটি রাষ্ট্রীয় সুশাসন ও ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রতীক। তারা দাবী করেছেন যে, ওয়াহিদাকে এমডি পদে রেখে দেয়া হলে, এটি ব্যাংকিং সেক্টরে একটি দৃষ্টান্ত থাকবে যা দুর্নীতি এবং রাজনৈতিক পীড়নকে উৎসাহ দেবে।

এই ঘটনা বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় প্রশাসনিক স্বচ্ছতার অভাব ও রাজনৈতিক প্রভাব নিয়ে নতুন প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। যদি আদালত প্রমাণ পায় যে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সংবিধানিক ও নীতিমালাগত নিয়ম ভঙ্গ করা হয়েছে, তাহলে তা শুধুমাত্র ওয়াহিদা বেগমের কর্মজীবনের প্রশ্নই নয়, এটি রাষ্ট্রায়ত্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মৌলিক ফাঁক-ফোকর দেখিয়ে দেবে।

হাইকোর্টের এই রুল নিসি একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, কারণ এটি দেখায়েছে যে, প্রকাশ্যভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে কত বড়ো অভিযোগ এবং সন্দেহ উঠেছে। ভবিষ্যতে, যদি আদালত তাদের নির্দেশনায় কঠোর হয়, তাহলে ব্যাংকিং সেক্টরে অনুমোদন প্রক্রিয়া, নিয়োগ ও শাসনব্যবস্থা আরও জবাবদিহিমূলক থাকতে বাধ্য হবে বলছেন কর্মকর্তারা।

১৯৯ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন
এলাকার খবর

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ সব খবর
সারাদেশ নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন