সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তিন নেতার মাজার
বৃহস্পতিবার , ২৩ অক্টোবর, ২০২৫ ৮:৩০ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এক কোনায় তিন নেতার মাজারে কারা কারা ঘুমিয়ে আছেন এখন কার প্রজন্মের অনেকেই তা জানেন না। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মৌখিক পরীক্ষায় এ প্রশ্ন করে এ ধরনের ধারণা আমার মনে এসেছে।
কর্মকালে এই তিন নেতার মধ্যে যে আহামরি মিল ছিল কিংবা তারা গলায় গলায় মিলিত হয়ে কাজ করতেন তা বলা যায় না।
তিনজনই মারা যান পরপর তিন বছরে শেরেবাংলা ১৯৬২ সনে, সোহরাওয়ার্দী ১৯৬৩ সনে এবং খাজা নাজিম উদ্দিন ১৯৬৪ সনে।
অবিভক্ত ভারতের রাজনীতিতে তিনজনই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। তবে আমার মনে হয় খাজা নাজিমুদ্দিনের গুরুত্ব অপেক্ষাকৃত কম ছিল। তুলনায় শেরে বাংলা একে ফজলুল হক এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী অনেক বেশি দাপুটে ছিলেন।
খাজা নাজিমুদ্দিন ঢাকার নবাব পরিবারের সদস্য ছিলেন এবং তিনি প্রায় ১০ বছর ঢাকা মিউনিসিপালিটি র চেয়ারম্যান ছিলেন। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান উনার ভাগ্নে। খাজা নাজিম উদ্দিন ও বিলাতে লেখাপড়া করেন। কলকাতায় ও লেখাপড়া করেন।
ঢাকা মিউনিসিপালিটি চেয়ারম্যানের পরে তার প্রথম বড় ধরনের লিফট হয় যখন তিনি অবিভক্ত বাংলার শিক্ষা মন্ত্রী হন সম্ভবত শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের কেবিনেটে। তারপর থেকেই তিনি বলা যায় রাজনীতিতে বিশেষ সক্রিয় হন। ৪৭ এর দেশভাগের পর তিনি পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন।
অবশ্য তার আগে অবিভক্ত বাংলার ও মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। কায়দে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নার মৃত্যুর পর তিনি পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল হন। পরবর্তীতে লিয়াকত আলী খান নিহত হলে তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন।
ভাষা আন্দোলনের প্রশ্নের তিনি যতদূর জানা যায় উর্দুর পক্ষে ছিলেন। কেউ কেউ মনে করেন পরবর্তীকালে তার মনের পরিবর্তন হয়েছিল। সঠিক ভাষ্য জানা মুশকিল।
এক পর্যায়ে পাকিস্তানের শাসন ব্যবস্থায় ঘনঘন শাসক পরিবর্তন দেখা দেয়। গভর্নর জেনারেল গোলাম মোহাম্মদ কেবিনেট ভেঙে দেন এবং বগুড়ার মোহাম্মদ আলী প্রধানমন্ত্রী হন। তার আগে তিনি আমেরিকাতে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। পদ হারিয়ে খাজা নাজিমুদ্দিন যখন অসুবিধায় পড়েন তখন নতুন করে আবার তাঁকে পাকিস্তান মুসলিম লীগের সভাপতি করা হয়। দুঃখের বিষয় এর অল্প দিন পরেই ৭০ বছর বয়সে তিনি মারা যান।
অবশ্য আগের দিনে ৭০ বছর বড় একটি সময় ধারণা করা হতো। এখন তো বেশিরভাগ মানুষই বাঁচতে চায় কমপক্ষে ৮০বছর । না হলেও প্রায় কাছাকাছি। এখন গড় আয়ু বেড়ে গেছে।
সোহরাওয়ার্দী মারা যান ৭২ বছর বয়সে। এদিক দিয়ে এগিয়েছিলেন শেরে বাংলা। তিনি মারা যান ৮৯ বছর বয়সে।
উপমহাদেশের রাজনীতিতে এই তিন নেতারই নানামুখী ভূমিকা ছিল।শেরে বাংলা ও সোহরাওয়ার্দীকে যতটা স্মরণ করা হয় সেই তুলনায় খাজা নাজিম উদ্দিন অনেকটাই অবহেলিত। ঐতিহাসিক বিভিন্ন কারণেই হয়তো এটি হয়ে থাকে।
অন্যদিকে সোহরাওয়ার্দী একটি বিখ্যাত পরিবারের সন্তান ও নানাভাবে সুশিক্ষিত হলেও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বলতে গেলে তার নানা বিধ সমালোচনা রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের জনসাধারণ গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং এর জন্য অনেকাংশেই তাকে দায়ী করে থাকে। আবার আমাদের দেশে তাকে গণতন্ত্রের মানসপুত্র বলা হয়ে থাকে। তিনি যখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী তখন দেশে-বিদেশে পাকিস্তান সুনাম অর্জন করে।
অন্যদিকে খাঁটি জনগণের নেতা বলতে যা বোঝায় শেরে বাংলা ছিলেন তাই। কৃষক প্রজাদের ঋণ শালিশি বোর্ড গঠন সহ বিভিন্ন কাজের জন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন। এর বাইরে অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তিনি তৈরি করেছিলেন।
আমার কাছে মনে হয় শেরেবাংলা একে ফজলুল হক এবং কবি কাজী নজরুল ইসলামের নামে এদেশে যত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাস্তাঘাট ইত্যাদি রয়েছে আর কারোর নামে এত বেশি নেই। অবশ্য বিবর্তনের ধারায় ইতিহাসের নানা ঘটনা ঘটেছে সব হিসেব তো আর আমি জানিনা।
লেখক: সাবেক সচিব।
১৪৩ বার পড়া হয়েছে