বাংলাদেশে হৃদ্রোগে মৃত্যু বাড়ছে: প্রতিদিন প্রাণ হারান ৭৭৭ জন

মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৫ ২:৪০ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
বাংলাদেশে হৃদ্রোগ ও রক্তনালির রোগ এখনো মৃত্যুর প্রধান কারণগুলোর একটি। প্রতিদিন গড়ে ৭৭৭ জন মানুষ এসব রোগে প্রাণ হারাচ্ছেন বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
একে দেশের জন্য গভীর স্বাস্থ্য সংকট হিসেবে দেখছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২১ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে প্রতিবছর প্রায় ৯ লাখ ১৭ হাজার ৩০০ মানুষের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে হৃদ্রোগ ও রক্তনালির রোগে মৃত্যুর সংখ্যা ২ লাখ ৮৩ হাজার ৮০০। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে মারা যাচ্ছেন ৭৭৭ জন। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ইনস্টিটিউট অব হেলথ ম্যাট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশন’ (IHME) জানায়, বাংলাদেশে প্রতিবছর হৃদ্রোগে মৃত্যু হয় অন্তত ২ লাখ ৫ হাজার মানুষের।
IHME–এর হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১ কোটি ২ লাখ ৬২ হাজারের বেশি মানুষ কোনো না কোনো ধরনের হৃদ্রোগে আক্রান্ত। প্রতিবছর নতুন করে প্রায় ৯ লাখ ৯২ হাজার মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন—যার মানে দিনে গড়ে ২,৭২০ জন। শিশুদের মধ্যেও হৃদ্যন্ত্রের জন্মগত ত্রুটি দিন দিন উদ্বেগজনক হারে দেখা যাচ্ছে। দেশে প্রায় ২ লাখ ৮৭ হাজার মানুষ জন্মগত হৃদ্রোগে ভুগছেন এবং প্রতিবছর নতুন করে শনাক্ত হচ্ছেন প্রায় ৪৮ হাজার ৬০০ জন।
হৃদ্রোগের পেছনে কী দায়ী?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে এখন আগের চেয়ে বেশি হৃদ্রোগ শনাক্ত হচ্ছে, কারণ পরীক্ষা ও চিকিৎসার সুযোগ বেড়েছে। তবে কায়িক শ্রমের অভাব, জাঙ্ক ফুডে অভ্যস্ততা, খেলাধুলার অভাব, হাঁটার জন্য পর্যাপ্ত পথ না থাকা, স্থূলতা এবং উচ্চ রক্তচাপ—এসব বিষয় হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
জাতীয় হৃদ্রোগ ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল শাফি মজুমদার বলেন, “উচ্চ রক্তচাপ হৃৎপিণ্ডের গঠন ও কার্যকারিতায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনে। এটি হৃদ্রোগের বড় কারণ।” দেশে হৃদ্রোগে মৃত্যুবরণকারী অন্তত ৫০ শতাংশ মানুষের অতীতে উচ্চ রক্তচাপ ছিল।
বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় সব ধরনের হৃদ্রোগের আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকলেও তা এখনও ঢাকাকেন্দ্রিক। ফলে অনেকেই চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যেতে বাধ্য হন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জেলা পর্যায়ে হৃদ্রোগ চিকিৎসা পৌঁছে দেওয়ার এখনই সময়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৮০ শতাংশ হৃদ্রোগ প্রতিরোধযোগ্য। এর জন্য দরকার স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন, লবণ ও চর্বিজাত খাবার কম খাওয়া, কায়িক শ্রম বাড়ানো এবং সচেতনতা বৃদ্ধি। জনস্বাস্থ্যবিদ আবু জামিল ফয়সাল বলেন, “শুধু চিকিৎসা নয়, হৃদ্রোগ প্রতিরোধে জাতীয় পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি। শহরে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন, তরুণদের সম্পৃক্ততা ও নেতৃত্বে আনা এখন প্রয়োজন।”
১১৪ বার পড়া হয়েছে