ইসলামী ব্যাংকে অস্থিরতা: ওএসডি ৪৯৫৩ জন, ছাঁটাই ২০০ জন

মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ২:৪৯ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
চট্টগ্রাম ও ঢাকায় ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডে নিয়োগসংক্রান্ত বির্তককে কেন্দ্র করে নতুন করে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।
সম্প্রতি ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ কোনো ধরনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও পরীক্ষা ছাড়া নিয়োগপ্রাপ্ত ৫ হাজার ৩৮৫ জন কর্মকর্তার জন্য বিশেষ যোগ্যতা মূল্যায়ন পরীক্ষা গ্রহণ করে। তবে এতে অংশ না নেওয়ায় ৪ হাজার ৯৫৩ জন কর্মকর্তাকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। একইসঙ্গে চাকরি বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০০ জনকে ছাঁটাই করা হয়েছে।
ঘটনার জেরে গত রোববার ও সোমবার চট্টগ্রামের পটিয়ায় বিক্ষোভে অংশ নেন কয়েকজন কর্মী। পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে।
ব্যাংকের চট্টগ্রামের চাক্তাই শাখার সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার মো. জিয়া উদ্দিন নোমান গত ২১ আগস্ট হাইকোর্টে রিট করে মূল্যায়ন পরীক্ষার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেন। আদালতের নির্দেশনায় বাংলাদেশ ব্যাংককে বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক গত ২৫ সেপ্টেম্বর রিটকারীর কাছে চিঠি দিয়ে জানায়, ইসলামী ব্যাংক একটি বেসরকারি লাভজনক প্রতিষ্ঠান এবং তাদের নিয়োগ ও অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্ত ব্যাংকের নিজস্ব এখতিয়ারভুক্ত। এ চিঠির মাধ্যমে রিট আবেদন নিষ্পত্তি হয়েছে বলে জানানো হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, “আদালতের নির্দেশনা অনুসারে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা দিয়েছে। এখন ইসলামী ব্যাংক যদি পরীক্ষায় অংশ না নেওয়া কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়, সেটি তাদের সিদ্ধান্ত।”
ইসলামী ব্যাংকের তথ্যমতে, বর্তমানে ব্যাংকে মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ২১ হাজার। এর মধ্যে ২০১৭ থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত প্রায় ১১ হাজার কর্মী নিয়োগ পান, যাদের বেশিরভাগের ক্ষেত্রেই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, অভিজ্ঞতা যাচাই ও মূল্যায়ন পরীক্ষা ছাড়াই নিয়োগ দেওয়া হয়।
চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলা থেকে এই সময়ের মধ্যে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীর সংখ্যা ৪ হাজার ৫২৪ জন, যাদের অনেকেই এস আলম গ্রুপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। উল্লেখ্য, ওই সময় ব্যাংকটি এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল।
ইসলামী ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং মানবসম্পদ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ড. কামাল উদ্দীন জসীম বলেন, “নিয়োগ নীতিমালা অনুসরণ না করায় অনেককে পরীক্ষা দিতে বলা হয়। যারা পরীক্ষায় অংশ নেয়নি, তাদের ওএসডি করা হয়েছে। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের দায়ে ২০০ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, কিছু নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীর একাডেমিক সনদ নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। বিশেষ করে বিজিসি ট্রাস্ট ও পোর্ট সিটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া সনদ যাচাইয়ে সহযোগিতা না করায় সন্দেহ আরও বেড়েছে। ইতোমধ্যে জাল সনদের অভিযোগে কয়েকজনকে চাকরি থেকে বরখাস্তও করা হয়েছে।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর ব্যাংকের পক্ষ থেকে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ইসলামী ব্যাংক একটি শরীয়াহভিত্তিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং রাষ্ট্রীয় ও নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার বিধিনিষেধ অনুসরণ করেই পরিচালিত হচ্ছে। সামাজিক মাধ্যমে কিছু ‘বিধিবহির্ভূতভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত’ ব্যক্তিদের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য গ্রাহক ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
১২৮ বার পড়া হয়েছে