খাগড়াছড়ির গুইমারায় সংঘর্ষে নিহত ৩, আহত বহু; উত্তপ্ত পার্বত্য জনপদ

সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ২:০৬ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে স্থানীয়দের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় সেনাবাহিনীর এক মেজরসহ ১৩ সেনাসদস্য, গুইমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সহ তিনজন পুলিশ সদস্য এবং বহু সাধারণ মানুষ আহত হয়েছেন। সংঘর্ষে নিহত তিনজনের মরদেহ খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে রাখা হয়েছে। তাদের শরীরে গুলির চিহ্ন রয়েছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
জেলা প্রশাসন ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, রোববার বিকেল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে গুইমারা থেকে নিহতদের মরদেহ এবং গুরুতর আহত চারজনকে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে পুলিশ। নিহতদের পরিচয় এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আজ সোমবার ময়নাতদন্ত শেষে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
উল্লেখ্য, পাহাড়ি এক কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’র ব্যানারে শনিবার ভোর ৫টা থেকে তিন পার্বত্য জেলায় একযোগে সড়ক অবরোধ শুরু হয়। এর ফলে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি, খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি এবং খাগড়াছড়ি-সাজেক সড়কে যান চলাচল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়। বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন স্থানে গাছের গুঁড়ি ফেলে, টায়ারে আগুন দিয়ে এবং রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভে অংশ নেয়।
শনিবার দুপুরে খাগড়াছড়ি ও বিকেলে গুইমারায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। রাতের দিকে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও রোববার সকাল থেকে নতুন করে উত্তেজনা শুরু হয়। দুপুরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে অবরোধকারীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় রামেসু বাজার ও আশপাশের এলাকায় দোকান ও বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। আগুনে অন্তত ২০টির বেশি দোকান ও ঘর পুড়ে যায়।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, মুখোশধারী একদল দুর্বৃত্ত লুটপাট ও অগ্নিসংযোগে জড়িত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়ে। সংঘর্ষে অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন বলে স্থানীয় বিভিন্ন পক্ষ দাবি করেছে।
পরিস্থিতির অবনতির প্রেক্ষিতে প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনী জেলা শহরে টহল জোরদার করেছে। দুর্গাপূজা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন এবং জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মাঠে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এই ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে গভীর দুঃখ প্রকাশ করে দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। একই সঙ্গে সব পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।
অবরোধ সমর্থনকারী সংগঠন জুম্ম ছাত্র-জনতা চার দফা দাবি জানিয়েছে। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে— ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, সমাবেশে হামলাকারীদের বিচার, আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা এবং হামলার তদন্ত ও বিচার।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা জানিয়েছেন, চলমান আন্দোলনের পেছনে একটি পক্ষ অর্থায়ন করছে এবং পাহাড়ে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। তার মতে, আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের অনেকের বয়স কম এবং তাদের পক্ষে একা এতদূর থেকে খরচ করে আসা সম্ভব নয়, যা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দেয়।
অবরোধের কারণে খাগড়াছড়ি জেলা কার্যত দেশের অন্যান্য অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। পরিবহন মালিকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা না পেলে যান চলাচল স্বাভাবিক করা সম্ভব নয়।
তবে প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর তৎপরতায় অবরোধে আটকে পড়া দুই হাজারেরও বেশি পর্যটককে নিরাপদে ঢাকায় পৌঁছানো হয়েছে।
১০৮ বার পড়া হয়েছে