শুল্ক জটিলতায় বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পার্সেল পাঠানো বন্ধ

সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১০:৫৬ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
যুক্তরাষ্ট্রে ছোট প্যাকেজে করমুক্ত সুবিধা (ডি মিনিমিস রুল) বাতিলের পর নতুন শুল্ক জটিলতায় বাংলাদেশের ডাক বিভাগ ২৮ আগস্ট থেকে দেশটিতে পার্সেল পাঠানো সম্পূর্ণ বন্ধ রেখেছে।
ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন অনলাইন উদ্যোক্তা, প্রবাসী পরিবারের সদস্য ও ছোট ব্যবসায়ীরা।
১৯৩৮ সাল থেকে চালু থাকা 'ডি মিনিমিস' নীতিমালায় ৮০০ ডলার পর্যন্ত মূল্যের পণ্য আমদানিতে শুল্ক ছাড় থাকলেও ২৯ আগস্ট থেকে তা প্রত্যাহার করে কঠোর কাস্টমস ব্যবস্থা চালু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর ফলে বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রমুখী ডাক পরিবহনে বড় ধস নামে।
বাংলাদেশে ক্ষতির মুখে ছোট উদ্যোক্তা ও অনলাইন ব্যবসা
বাংলাদেশে যেসব ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা প্রবাসী মার্কিন গ্রাহকদের কাছে হস্তশিল্প, পোশাক ও নিত্যব্যবহার্য পণ্য পাঠিয়ে থাকেন, তারা এই জটিলতায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
মিরপুরের হস্তশিল্প বিক্রেতা ‘ফিনারি’র মালিক ড. চিং জানান,
“এই মাসে একটিও পার্সেল যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাতে পারিনি। ডাকঘরে জানানো হয়েছে আপাতত সেবাটি বন্ধ।”
পুরান ঢাকার কাপড় ব্যবসায়ী তারেক আজিজ বলেন,
“অর্ডার থাকলেও শাড়ি বা সালোয়ার কামিজ পাঠাতে পারছি না। অনেক ক্রেতা অর্ডার বাতিল করেছেন। বেসরকারি কুরিয়ারে খরচ তিনগুণ—এভাবে ব্যবসা চালানো অসম্ভব।”
শুধু ব্যবসায়ী নয়, ব্যক্তিগত প্রেরকরাও ভোগান্তির শিকার।
পান্থপথের প্রলয় কুমার দে বলেন,
“ছেলের জন্য শীতের কাপড়, খাবার, বই পাঠাতে চেয়েছিলাম। পোস্ট অফিস বন্ধ, আর বেসরকারি কুরিয়ারের খরচ হাতের নাগালে নেই।”
ডাক বিভাগের সেবাও থমকে গেছে
ঢাকা জিপিও কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শুল্ক নীতির জটিলতায় যুক্তরাষ্ট্রগামী পার্সেল কার্যত থমকে আছে। যদিও সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই, তবে প্রতিদিন গড়ে জিপিও থেকে ১৫০টি পার্সেল পাঠানো হতো, যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ যেত যুক্তরাষ্ট্রে।
আন্তর্জাতিক পার্সেল প্যাকেজিং বিভাগে গিয়ে দেখা গেছে, সাধারণত যেখানে সারি ধরে ভিড় থাকত, সেখানে এখন ফাঁকা। কর্মকর্তারাও স্বীকার করছেন, যুক্তরাষ্ট্রে পার্সেল পাঠানো বন্ধ থাকায় কার্যক্রম প্রায় অচল।
ডাক অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (ডাক পরিষেবা) পারভীন বানু জানান,
“আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছি। আশাবাদী, খুব শিগগিরই সমাধান হবে।”
বৈশ্বিক প্রভাব
শুধু বাংলাদেশ নয়, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিয়মের ফলে বিশ্বব্যাপী প্রভাব পড়েছে। এএফপি’র তথ্য অনুযায়ী, ডি মিনিমিস সুবিধা বাতিল হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রমুখী ডাক পার্সেল পরিবহন ৮১ শতাংশ কমে যায়। অন্তত ৮৮টি দেশ পার্সেল সেবা স্থগিত বা সীমিত করেছে।
বিকল্প? ব্যয়বহুল বেসরকারি কুরিয়ার
ডিএইচএল, ফেডেক্সের মতো বেসরকারি কুরিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো পার্সেল নিচ্ছে, তবে উচ্চ মূল্যে। গ্রাহক দীপঙ্কর রায় জানান,
“আগে ২-৩ হাজার টাকায় ২ কেজি পার্সেল পাঠানো যেত, এখন সেই খরচ দাঁড়িয়েছে ৭-১০ হাজার টাকায়।”
একজন ফেডেক্স কর্মকর্তা জানান, ১০০ ডলারের নিচে পণ্যে তেমন কর নেই, তবে এর বেশি হলে প্রায় ৩০%
শুল্ক আরোপ হচ্ছে। ডিএইচএলের এক কর্মকর্তা বলেন,
“গ্রাহকদের এখন প্রতিটি চালানের জন্যই বাড়তি কর গুণতে হচ্ছে। তাই পাঠানোর হার কমে গেছে।”
১৬৪ বার পড়া হয়েছে