সর্বশেষ

অর্থনীতি

রেমিট্যান্সে রেকর্ড : প্রবাসীদের অর্থপ্রদানে জোয়ার, কমেছে হুন্ডি প্রবণতা

স্টাফ রিপোর্টার
স্টাফ রিপোর্টার

মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ৬:১৩ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
সরকার পরিবর্তনের পর দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহে রেকর্ড ভাঙা জোয়ার দেখা দিয়েছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ২,১৪৬ কোটি মার্কিন ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় ২ লাখ ৬১ হাজার ৮১২ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে)।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্যে দেখা যাচ্ছে, এ সময়ের রেমিট্যান্স প্রবাহ ২০২৪ সালের একই সময়ের তুলনায় ৪২৩ কোটি ডলার বেশি, যা প্রায় ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার সমপরিমাণ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক পরিবর্তনের ফলে প্রবাসীদের আস্থা বেড়েছে, এবং হুন্ডির বদলে ব্যাংকিং চ্যানেলকে গুরুত্ব দেওয়া শুরু করেছেন তারা।

২০২৫ সালের মার্চ মাসে এসেছে দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ মাসিক রেমিট্যান্স—৩৩০ কোটি মার্কিন ডলার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মে মাসে ২৯৭ কোটি ডলার, আর তৃতীয় সর্বোচ্চ এপ্রিল মাসে ২৭৫ কোটি ডলার।

এর আগে ২০২০ সালের জুলাইয়ে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিল—২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলার, যা তখনকার কোভিড পরিস্থিতি ও ঈদুল আজহার সময় প্রবাসীদের বাড়তি অর্থপ্রেরণায় সম্ভব হয়েছিল।

মাসভিত্তিক রেমিট্যান্সের চিত্র (২০২৫):

জানুয়ারি: ২১৯ কোটি ডলার
ফেব্রুয়ারি: ২৫৩ কোটি ডলার
মার্চ: ৩৩০ কোটি ডলার
এপ্রিল: ২৭৫ কোটি ডলার
মে: ২৯৭ কোটি ডলার
জুন: ২৮২ কোটি ডলার
জুলাই: ২৪৮ কোটি ডলার
আগস্ট: ২৪২ কোটি ডলার

 

অন্যদিকে, ২০২৪ সালের একই সময়ের তুলনায় প্রতিটি মাসেই ২০২৫ সালে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেশি ছিল।

প্রবাসী আয় ও রপ্তানি প্রবৃদ্ধির কারণে ২০২৫ সালের জুন শেষে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১.৩৩ বিলিয়ন ডলার (গ্রস রিজার্ভ)।
যদিও আকুর (Asian Clearing Union) বিল পরিশোধের পর আগস্টের শুরুতে তা কিছুটা কমে ২৯.৫৩ বিলিয়নে নেমে আসে, তবুও এটি গত বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি।

২০২৪ সালের আগস্টে রিজার্ভ ছিল মাত্র ২০.৪৮ বিলিয়ন ডলার, যা থেকে ২০২৫ সালের একই সময়ে রিজার্ভ বেড়েছে প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলার।

অর্থবছরভিত্তিক রেমিট্যান্সের ইতিহাসে নতুন রেকর্ড
২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবাসী আয় ছাড়িয়ে গেছে আগের সব রেকর্ড। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে দেশে এসেছে ৩০.৩৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স।

 

তুলনামূলকভাবে:

২০২৩-২৪ অর্থবছরে রেমিট্যান্স ছিল ২৩.৯১ বিলিয়ন ডলার
২০২২-২৩ সালে ২১.৬১ বিলিয়ন ডলার
২০২১-২২ সালে ২১.০৩ বিলিয়ন ডলার
২০২০-২১ সালে ২৪.৭৮ বিলিয়ন ডলার
হুন্ডি কমেছে, মূল্যস্ফীতিও নিয়ন্ত্রণে

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, “ডলারের দরের স্থিতিশীলতা মূল্যস্ফীতি কমার অন্যতম কারণ। আর এটি সম্ভব হয়েছে প্রবাসীরা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে আরও বেশি অর্থ পাঠানোয়। হুন্ডির প্রবণতা এখন অনেকটাই কমে এসেছে।”

 

তিনি আরও বলেন, “কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কড়াকড়ি নজরদারি, অর্থপাচার প্রতিরোধ এবং প্রবাসীদের সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে রেমিট্যান্সে এই জোয়ার এসেছে। ব্যাংকিং চ্যানেলেই এখন অধিকাংশ প্রবাসী অর্থ পাঠাচ্ছেন।”

রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির পাশাপাশি, ডলারের দাম স্থিতিশীল রাখা, কম সুদের ঋণ এবং রপ্তানি আয়ে গতি থাকায় দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

১২৯ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
অর্থনীতি নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন