রাজশাহীতে একই পরিবারের চারজনের রহস্যজনক মৃত্যু: চিরকুট উদ্ধার

শুক্রবার, ১৫ আগস্ট, ২০২৫ ১০:২১ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
রাজশাহীর পবা উপজেলার পারিলা ইউনিয়নের বামনশিকড় গ্রামে শুক্রবার দুপুরে এক পরিবারের চারজনের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ঘটনাটি এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
মৃতরা হলেন, মিনারুল ইসলাম (৩৫), তার স্ত্রী মনিরা খাতুন (৩১), ছেলে মাহিম (১৪) এবং মেয়ে মিথিলা (৩)। প্রতিবেশীরা জানায়, রাতে ঘটে যাওয়া এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বৃহস্পতিবার রাতের দিকে স্ত্রী-সন্তানদের শ্বাসরোধে হত্যা করার পর নিজে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন মিনারুল। তবে, এ ঘটনার পেছনে কী কারণ ছিল তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, মৃতদেহগুলো একটি ঘরে পাওয়া গেছে। মনিরা ও মিথিলার লাশ বিছানায় ছিল, পাশের ঘরে ছিল মাহিমের লাশ। মিনারুলের লাশ ঝুলছিল ফ্যানের সঙ্গে। ঘটনাস্থল থেকে দুটি চিরকুট উদ্ধার করা হয়, যা ধারণা করা হচ্ছে, মিনারুলই লিখেছেন। স্বজনেরা বলেছেন, হাতের লেখাটি মিনারুলের।
চিরকুটে লেখা ছিল, ‘আমি মিনারুল, নিচের লেখা আমার নিজের কথা। এই কারণে আমরা চারজন আজ রাতে মরতে যাচ্ছি। কারো দোষ নয়। বাংলার পুলিশ কাকে না কাকে ফাঁসিয়ে টাকা খাবে। আমি প্রথমে আমার স্ত্রীকে মেরেছি, তারপর আমার ছেলেকে, মেয়েকে। শেষে আমি নিজে গলায় ফাঁস দিয়েছি।’
অন্য একটি চিরকুটে লেখা ছিল, ‘আমি নিজ হাতে সবাইকে হত্যা করেছি। কারণ, আমি একা থাকলে আমার পরিবার কোথায় থাকবে? আমাদের কষ্ট ও দুঃখের কারণ ছিল ঋণ ও জীবিকার তাগিদ। এই কষ্ট আর সহ্য না করে আমি ওরা সবাইকে মেরে ফেলেছি। মরে যেতে পেরে ভালো হলো।’
স্থানীয়রা বলছেন, মিনারুলের আর্থিক পরিস্থিতি বেশ দুর্বিষহ ছিল। তার ঋণের বোঝা ও জুয়া খেলার অভ্যাসের কারণে তিনি বেশিরভাগ সময় ঘর থেকে দূরে থাকতেন। তার পরিবারের সদস্যরা রাতের ঘটনাকে খুবই চমকপ্রদ ও দুঃখজনক হিসেবে দেখছেন।
প্রাথমিক তদন্তের মাধ্যমে পুলিশ মনে করছে, মিনারুলের আত্মহত্যার কারণ আর্থিক সংকট ও মানসিক দুশ্চিন্তা হতে পারে। তবে, পরিবারের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত করতে ময়নাতদন্তের রিপোর্টের অপেক্ষা করছে। রাজশাহী মহানগর পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান জানান, ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন।
তিনি আরও বলেন, “এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি, তবে মনে হচ্ছে স্ত্রী ও মেয়েকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। মিনারুল নিজে গলায় ফাঁস দিয়ে থাকতে পারেন। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ছাড়া নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। চিরকুটের লেখাটা মিনারুলেরই বলে মনে হচ্ছে, যেখানে আর্থিক সমস্যা ও মানসিক অবস্থা উঠে এসেছে। তদন্ত চলমান।”
১৩২ বার পড়া হয়েছে