আইন-আদালত

ভুয়া মামলা থেকে ১৭ বছরের ফাইয়াজকে অব্যাহতি দিল আদালত

স্টাফ রিপোর্টার
স্টাফ রিপোর্টার

রবিবার, ২০ জুলাই, ২০২৫ ১০:৩৯ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে অনুষ্ঠিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় দায়ের হওয়া 'পুলিশ হত্যা মামলা' থেকে ১৭ বছর বয়সী কিশোর হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত।

রবিবার (২০ জুলাই) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) প্রসিকিউশন বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মাঈন উদ্দিন চৌধুরী গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, নতুন সংযোজিত ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩(ক) ধারার অধীনে দাখিলকৃত অন্তর্বর্তীকালীন তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ফাইয়াজকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

নির্দোষ প্রমাণিত কিশোর
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গোয়েন্দা বিভাগের (ওয়ারী) পরিদর্শক মোল্লা মো. খালিদ হোসেন গত ১৩ জুলাই ঢাকা মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট জিমএম ফারহান ইশতিয়াকের আদালতে অন্তর্বর্তীকালীন তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। আদালত প্রতিবেদনের পর্যালোচনা শেষে রায় দেন।

আদেশে বলা হয়, “তদন্তে দেখা গেছে, ১৭ বছর ৩ মাস বয়সী হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজের বিরুদ্ধে উক্ত মামলার ঘটনায় জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ মেলেনি। ফলে তাকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো।”

আইন অনুযায়ী সময়মতো অব্যাহতি
২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে সংযোজিত ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩(ক) ধারার আওতায় পুলিশ কমিশনার বা সমমর্যাদার কর্মকর্তারা কোনো মামলায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আগেভাগেই নির্দোষ হিসেবে চিহ্নিত করলে তদন্তকারী কর্মকর্তাকে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে প্রাথমিক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিতে পারেন। আদালত যদি তা যৌক্তিক মনে করেন, তবে নির্দোষ ব্যক্তিকে বিচার শুরুর আগেই মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া যায়।

এই বিধানের আওতাতেই হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, যিনি দীর্ঘদিন ধরে ভুয়া মামলায় হয়রানির শিকার হচ্ছিলেন।

আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ও মামলার পটভূমি
গত বছরের ১৯ জুলাই ঢাকার রায়েরবাগ এলাকায় কোটা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে এক আন্দোলনকারী নিহত হন। অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের হামলায় ওই এলাকা দখলে নেওয়া হয় এবং এক পর্যায়ে পুলিশ সদস্য গিয়াস উদ্দিনকে নির্মমভাবে হত্যা করে ফুটওভার ব্রিজে ঝুলিয়ে রাখা হয়। তার মোটরসাইকেলও চুরি হয়।

এই হত্যাকাণ্ডের পর যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা হয়, যাতে কিশোর ফাইয়াজকে ১৬ নম্বর এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়। পরবর্তীতে পুলিশ আটজনকে গ্রেপ্তার করে।

তবে তদন্তে দেখা যায়, মামলার আসামিদের মধ্যে অধিকাংশই বিএনপি, জামায়াত ও কোটাবিরোধী আন্দোলনের কর্মী হলেও, হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্টতার কোনো বাস্তব প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বরং, সে বর্তমানে পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারে (PTSD) ভুগছে বলেও তদন্তে উঠে আসে।

শিশুর ভবিষ্যতের কথা বিবেচনায় আদালতের সিদ্ধান্ত
তদন্ত কর্মকর্তার প্রতিবেদনে বলা হয়, “একজন শিশু হিসেবে তার মানসিক বিকাশ ও পড়াশোনার স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি। মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তির আগেই তাকে দায়মুক্ত করা প্রয়োজন, যাতে সে মানসিক চাপমুক্ত থাকতে পারে।”

ফলে আদালত তদন্ত চলাকালীন অবস্থায়ই তাকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেন।

১২০ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
আইন-আদালত নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন