সর্বশেষ

সারাদেশ

নওগাঁয় প্রথমবারের মতো হচ্ছে ‘ম্যাংগো ফেস্টিভ্যাল ২০২৫’

মামুনুর রশীদ বাবু, নওগাঁ
মামুনুর রশীদ বাবু, নওগাঁ

শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫ ৭:২৩ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
উত্তরের খাদ্যভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত নওগাঁ জেলার কৃষিচিত্রে আম এখন এক বিশাল সম্ভাবনার নাম। চাল উৎপাদনের জন্য খ্যাত এ জেলার দ্বিতীয় প্রধান ফসলে পরিণত হয়েছে আম।

বরেন্দ্র অঞ্চলের সাপাহার, পত্নীতলা, পোরশা, ধামইরহাট, নিয়ামতপুরের পাশাপাশি জেলার অন্যান্য উপজেলায়ও ক্রমেই বাড়ছে আমচাষ। দেশের বাজার ছাড়িয়ে প্রতিবছর রপ্তানি হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।

নওগাঁর নাকফজলি আম ইতোমধ্যে পেয়েছে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) সনদ। লাল মাটির বরেন্দ্রভূমিতে উৎপাদিত সুমিষ্ট, সুস্বাদু আম্রপালি আম দেশের গণ্ডি পেরিয়ে পৌঁছে গেছে আন্তর্জাতিক বাজারে। আম উৎপাদনে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে নওগাঁ।

এই আম খ্যাতিকে আরও ছড়িয়ে দিতে প্রথমবারের মতো নওগাঁর সাপাহারে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দুই দিনব্যাপী ‘ম্যাংগো ফেস্টিভ্যাল ২০২৫’।
১৮ ও ১৯ জুলাই সাপাহার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এই উৎসব আয়োজন করবে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায়।

উৎসবের আয়োজন:
“আসুন সাপাহারের রূপালি আমের স্বাদ ছড়িয়ে দেই দেশ-বিদেশে”— এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে উৎসবে থাকবে আম বিক্রি ও প্রদর্শনী, আমভিত্তিক খাবারের স্টল, আম চাষি ও অনলাইন সরবরাহকারীদের তথ্য সম্বলিত স্টল, তাৎক্ষণিক কুরিয়ার সার্ভিসের সুবিধা— যার মাধ্যমে দেশ-বিদেশে আম পাঠানো যাবে।

এছাড়া ১০০ জন অংশগ্রহণকারীর জন্য দুই দিনব্যাপী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে, যেখানে আমের রোগবালাই, উৎপাদন কৌশল ও বাজারজাতকরণ নিয়ে আলোচনা হবে। পাশাপাশি আম রপ্তানি এবং বাজার সম্প্রসারণ বিষয়ক উন্মুক্ত সেমিনারে থাকবেন খাত সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। প্রতিদিন বিকেলে থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আম ভিত্তিক ভোজন প্রতিযোগিতা।

বিপুল উৎপাদন ও লক্ষ্যমাত্রা:
নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, চলতি বছর জেলায় ৩০ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৮৬ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের। বাজারে এর আনুমানিক মূল্য প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা।
জেলার ঐতিহ্যবাহী আম্রপালি ও নাকফজলি ছাড়াও এবার চাষ হয়েছে ব্যানানা ম্যাংগো, মিয়াজাকি, কাটিমন, গৌড়মতি, বারি-৪সহ দেশি-বিদেশি ১৬ জাতের আম।

‘আমকে ঘিরে অর্থনীতির বিপ্লব’
জেলা কৃষি কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, গত এক দশকে নওগাঁয় আমচাষে নিরব বিপ্লব ঘটেছে। তার মতে, “ম্যাংগো ফেস্টিভ্যালের মাধ্যমে দেশের কৃষি খাত ও নওগাঁর আমের ব্র্যান্ডিং দেশ-বিদেশের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের আকৃষ্ট করবে।”

নওগাঁ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর শরিফুল ইসলাম খান বলেন, “এই উৎসব স্থানীয় অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখবে, তৈরি হবে নতুন উদ্যোক্তা। একই সঙ্গে কুচক্রী মহলের বিভ্রান্তি ও অপপ্রচার বন্ধেও সহায়ক হবে।”

জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল আউয়াল বলেন, “নওগাঁর আম আমাদের ব্র্যান্ড। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী রাজশাহী বা চাঁপাইয়ের নামে নওগাঁর আম বিক্রি করে, এতে সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এ অবস্থায় আমাদের আমকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরতে এই উৎসব বড় ভূমিকা রাখবে।”

তিনি আরও বলেন, “সাপাহার এখন দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম আম বাজারে পরিণত হয়েছে। আমকে ঘিরে শিল্পকারখানা গড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তবে মধ্যস্বত্বভোগীরা লাভবান হলেও প্রকৃত চাষিরা ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হন। তাই আমচাষি ও কৃষককেই সামনে রেখেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”

১২১ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
সারাদেশ নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন