২৪ ঘণ্টায় ফেনীতে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত, দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বিপর্যস্ত জনজীবন

মঙ্গলবার, ৮ জুলাই, ২০২৫ ১১:৩৮ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
পশ্চিম ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। এরসঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তা যুক্ত হয়ে বাংলাদেশের উপকূলজুড়ে শুরু হয়েছে অতিভারী বৃষ্টিপাত।
ফেনীতে টানা বৃষ্টিপাতের ফলে শহরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত চব্বিশ ঘণ্টায় ২৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা এ বছরের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত বলে জানিয়েছে ফেনী আবহাওয়া অফিস।গতকাল থেকে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টির কারণে শহরের শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার সড়ক, ডাক্তারপাড়া, মিজান রোড, কলেজ রোড, একাডেমি রোড, রামপুর শাহীন একাডেমি এলাকা, পাঠানবাড়ি এলাকা, নাজির রোড, পেট্রোবাংলাসহ বিভিন্ন এলাকার সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
ফেনী জেলায় মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ১২ ঘণ্টা এ অবস্থা বজায় থাকতে পারে। ফলে ফেনী জেলার নিম্নাঞ্চল সাময়িকভাবে প্লাবিত হতে পারে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
এরই অংশ হিসেবে পটুয়াখালীতে সোমবার (৭ জুলাই) সকাল ৯টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস।
টানা কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিতে পটুয়াখালী পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ডুবে গেছে সবুজবাগ, শেরেবাংলা সড়ক, পুরান বাজার, নতুন বাজার, এসডিও রোড ও তিতাস মোড়সহ শহরের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। একইসঙ্গে গ্রামাঞ্চলেও তলিয়ে গেছে বহু মাছের ঘের ও পুকুর।
পটুয়াখালী জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুবা সুখী জানিয়েছেন, পটুয়াখালীতে গত ২৪ ঘণ্টায় ২৩২ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। বরিশাল, খুলনা, পটুয়াখালী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলে দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ১ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
টানা ভারী বৃষ্টিতে খুলনা শহরের বেশির ভাগ সড়ক ও নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। বাসাবাড়ি ও দোকানপাটে পানি ঢুকে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী। এমন পরিস্থিতিতে জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশনের নেওয়া প্রায় ৮২৪ কোটি টাকার প্রকল্পের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
খুলনা আবহাওয়া কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ মিজানুর রহমান বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে গতকাল সোমবার বিকেল চারটা থেকে খুলনায় ভারী বর্ষণ শুরু হয়। মাত্র দুই ঘণ্টায় ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে ৮২ মিলিমিটার। আগামীকাল বুধবার থেকে বৃষ্টিপাত কিছুটা কমতে পারে।
সরেজমিন দেখা গেছে, নগরের নতুন রাস্তা মোড়, আবু নাসের হাসপাতাল এলাকা, মুজগুন্নি সড়কের বয়রা পুলিশ লাইন, আহসান আহমেদ রোড, খানজাহান আলী সড়কের রয়েল মোড়, কেএমপি সদর দপ্তর, দোলখোলা মোড়, নতুন বাজার, লবণচরা, টুটপাড়া এলাকার সড়কে হাঁটুপানি। যেসব সড়কে উন্নয়নকাজ চলছে, সেখানে ভোগান্তি আরও বেড়েছে।
কক্সবাজারে বৃষ্টি থামায় নামতে শুরু করেছে বন্যার পানি। সদর উপজেলার কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা থাকলেও পাঁচ উপজেলার শতাধিক গ্রাম থেকে পানি নামছে বলে জানা গেছে। ঘরে পানি ওঠায় দুর্ভোগ বেড়েছে দুর্গত এলাকার মানুষজনের। প্রশাসন থেকে কিছু এলাকায় শুকনা খাবার পৌঁছালেও পানির কারণে অনেক বাড়িতেই চুলা জ্বলেনি।
জেলায় আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে ভারী বর্ষণ হচ্ছে না। টানা চার দিনের বর্ষণ ও পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে এখনো কক্সবাজার সদর, রামু, উখিয়া, টেকনাফ ও চকরিয়া উপজেলার শতাধিক গ্রামের অন্তত ৮০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছিলেন। এর মধ্যে কেবল টেকনাফের অন্তত ৫০টি গ্রামে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছিল। তবে ওই সব এলাকা থেকে এখন পানি নামছে।
গত চার দিনের ভারী বর্ষণে টেকনাফের পাঁচটি ইউনিয়নের অন্তত ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছিল। তাতে ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী ছিলেন। আজ সকাল থেকে বৃষ্টি কম হওয়ায় টেকনাফ পৌরসভার কলেজপাড়া, শীলবুনিয়াপাড়া, ডেইলপাড়া, জালিয়াপাড়া, খানকারডেইল, চৌধুরীপাড়া, কেকেপাড়া থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। অন্যদিকে হ্নীলা ও হোয়াইক্যং ইউনিয়নের জালিয়াপাড়া, সাইটপাড়া, ফুলের ডেইল, আলী আকবরপাড়া, রঙ্গিখালী লামার পাড়া, আলীখালী, চৌধুরীপাড়া, পূর্ব পানখালী, মৌলভীবাজার, লামার পাড়া, ওয়াব্রাং, সুলিশপাড়া ও পূর্ব সিকদারপাড়া থেকেও বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। পাহাড়ধসের ঝুঁকি থাকায় কয়েক শ' মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে এনেছে উপজেলা প্রশাসন।
শুধুমাত্র গত ২৪ ঘণ্টায় নোয়াখালীতে ১২৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এমন বৃষ্টিপাতে ডুবেছে নোয়াখালীর জেলা শহর। সড়ক বিভাগের ফোর লেন সড়ক ছাড়া সকল সড়ক ও অলিগলির রাস্তাঘাট তলিয়েছে পানিতে। এমনকি অনেক বাসাবাড়িও পানিতে ডুবেছে।
মঙ্গলবার সকালে জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আজ সকাল ৯টা থেকে আগের ২৪ ঘণ্টায় ১২৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে আরও ভারি বৃষ্টি হতে পারে। এমতাবস্থায় নদী বন্দরে ১ নম্বর ও সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এদিকে টানা বর্ষণে জেলা শহরের প্রেসক্লাব সড়ক, টাউন হল মোড়, ইসলামিয়া সড়ক, ডিসি সড়ক, মহিলা কলেজ সড়ক, জেল খানা সড়ক, মাইজদী বাজার সড়কসহ বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে সড়কগুলোতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। চরম দুর্ভোগে পড়েছে শহরবাসী।
১২৮ বার পড়া হয়েছে