ভাসমান স্কুলের উদ্ভাবক রেজোয়ান পেলেন “ইয়েল বিশ্ব ফেলো”

শনিবার, ২৯ মার্চ, ২০২৫ ৮:৩৩ অপরাহ্ন
শেয়ার করুন:
চলনবিলের ভাসমান স্কুলের উদ্ভাবক মোহাম্মদ রেজোয়ান ২০২৫ সালের "ইয়েল বিশ্ব ফেলো" হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।
ইয়েল ইউনিভার্সিটি প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্ব প্রদানে সক্ষম ব্যক্তিদের এই মর্যাদাপূর্ণ ফেলোশিপ প্রদান করে, যা বিশ্বের অন্যতম সেরা এবং প্রতিযোগিতামূলক প্রোগ্রামগুলোর একটি।
মোহাম্মদ রেজোয়ানের প্রতিষ্ঠিত সংস্থা সিধুলাই স্ব-নির্ভর সংস্থা থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় যে, এবছর ৪,২০০ প্রার্থী থেকে মাত্র ১৬ জনকে "ইয়েল বিশ্ব ফেলো" হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছে। এই ব্যক্তিরা শাসন, জলবায়ু পরিবর্তন, ব্যবসা, গণমাধ্যম, আইন, প্রযুক্তি এবং সাংস্কৃতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। তাদের মধ্যে তিনজন অলাভজনক (এনজিও) সংস্থায় কাজ করছেন।
রেজোয়ান ছাড়াও, সুইডেনের পরিবেশবান্ধব ব্যবসার প্রবক্তা ম্যাথিয়াস উইকস্ট্রম, জর্জিয়ার সাবেক সংসদ ভাইস-স্পিকার ও গণতন্ত্র বিশেষজ্ঞ তামার চুগোশভিলি, নাইজেরিয়ার সংগীতশিল্পী বুকোলা এলেমিদে (আসা), মিশরীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা মারিয়াম এল মারাকেশি এবং প্যারাগুয়ের শীর্ষস্থানীয় বিচার বিভাগের ব্যক্তিত্ব ভিভিয়ান নুনেজ উল্লেখযোগ্য।
"ইয়েল বিশ্ব ফেলো" প্রোগ্রাম একটি চার মাসব্যাপী পূর্ণকালীন রেসিডেনশিয়াল প্রোগ্রাম, যা ইয়েল ইউনিভার্সিটির ইন্টারন্যাশনাল লিডারশিপ সেন্টার দ্বারা পরিচালিত এবং জ্যাকসন স্কুল অব গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স-এ অনুষ্ঠিত হয়।
এ প্রসঙ্গে ইয়েল ইন্টারন্যাশনাল লিডারশিপ সেন্টারের ডিরেক্টর এমা স্কাই মন্তব্য করেছেন, "ভাসমান স্কুল শুধু বাংলাদেশের জন্যই নয়, এটি এখন বিশ্বের প্রত্যাশার অংশ। রেজোয়ানের উদ্ভাবিত ভাসমান শিক্ষার মডেল জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। গত দুই দশকে তার নেতৃত্বে পরিচালিত উদ্যোগগুলো দেখিয়েছে যে, জলবায়ু অভিযোজনের জন্য স্থানীয় উদ্ভাবন বিশ্বজুড়ে প্রভাব ফেলতে পারে।"
মোহাম্মদ রেজোয়ান, যিনি বন্যা কবলিত অঞ্চলে বেড়ে উঠেছেন, তিনি এই চ্যালেঞ্জকে সংকট হিসেবে না দেখে, নতুন সমাধান বের করার পথ খুঁজেছেন। ২০০২ সালে তিনি বিশ্বের প্রথম ভাসমান স্কুলের ধারণা বাস্তবায়ন করেন। সৌরবিদ্যুৎ চালিত নৌকা ব্যবহার করে চলা এই স্কুলগুলো বন্যার মধ্যেও শিশুদের শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করে।
শুধু শিক্ষা নয়, তার উদ্যোগগুলো ভাসমান গ্রন্থাগার, স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, প্লেগ্রাউন্ড এবং ভাসমান কৃষি খামারের মতো বিভিন্ন সেবা সম্প্রসারণ করেছে। বাংলাদেশের সরকার তার ভাসমান স্কুল মডেলকে জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনায় (২০২৩-২০৫০) অন্তর্ভুক্ত করেছে। তার মডেল এখন পর্যন্ত এশিয়া ও আফ্রিকার আটটি দেশে সফলভাবে অনুসরণ করা হয়েছে।
বিশ্ব ফেলো হিসেবে নির্বাচিত হয়ে, রেজোয়ান ইয়েল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের লেকচার এবং পরামর্শ প্রদান করবেন। তিনি জলবায়ু পরিবর্তন এবং শিক্ষার উন্নয়ন নিয়ে বৈশ্বিক আলোচনায় অংশ নেবেন, গবেষণামূলক কাজ করবেন এবং বাংলাদেশের অভিজ্ঞতাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরবেন।
মোহাম্মদ রেজোয়ান বলেন, "এই স্বীকৃতি বাংলাদেশের সকল সংগ্রামী মানুষের জন্য, যারা আমাদের প্রতিনিয়ত অনুপ্রাণিত করেছেন। তাদের থেকেই আমাদের প্রেরণা পাওয়া, যার মাধ্যমে আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি যে, পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে নতুন সমাধান আসতে পারে। আশা করি, ইয়েল ইউনিভার্সিটির এই স্বীকৃতি আমাদের ভাসমান স্কুল মডেলকে বিশ্বের আরও অনেক স্থানে ছড়িয়ে দিতে সহায়তা করবে।"
২০০২ সালে শুরু হওয়া মরিস আর. গ্রিনবার্গ বিশ্ব ফেলো প্রোগ্রামটি ইয়েল ইউনিভার্সিটির ইন্টারন্যাশনাল লিডারশিপ সেন্টারের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। এই ফেলোশিপ ভবিষ্যৎ নেতা গড়ে তোলার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে পরিচিত। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অনেকেই পরে বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, যেমন রাশিয়ার দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের নেতা আলেক্সেই নাভালনি, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান, আর্জেন্টিনার সাবেক অর্থমন্ত্রী মার্টিন লুস্তু এবং লিচেনস্টাইনের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাটরিন এগেনবার্গার।
রেজোয়ান এবং তার ভাসমান স্কুলকে জাতিসংঘের বিভিন্ন ফান্ড এবং প্রোগ্রাম যেমন ইউনিসেফ, ইউএনইপি, ইউএনডিপি কর্তৃক উদ্ভাবন হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। ২০১৯ সালে, ব্রিটিশ বই 'আর্থ হিরোস' তাকে বিশ্বের ২০ জন "আর্থ হিরো"-এর মধ্যে এক হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তার ভাসমান স্কুল বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
১২৬ বার পড়া হয়েছে